এসএমই খাত উন্নয়নে প্রয়োজন নীতি সহায়তা, জমা পড়েছে ১৪০ প্রস্তাব

আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে ইতোমধ্যে ১৪০টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (১৩ মে) এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ইআরএফ-এর সহযোগিতায় ‘এসএমইবান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬’ মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ইআরএফ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী এবং পরিচালক ও বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম।

সেমিনারে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আরও জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন এ যাবত শিল্পনীতি ২০১৬ ও ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯, এসডিজি ২০৩০, অন্যান্য সরকারি নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এছাড়া এসএমইবান্ধব ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গবেষণা ও পলিসি অ্যাডভোকেসি, ক্লাস্টার উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, আইসিটি সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন, নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়ন, সহজ শর্তে অর্থায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ফাউন্ডেশন। এসব কার্যক্রমের সরাসরি সুবিধাভোগী প্রায় ২ লাখ এবং পরোক্ষ সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ উদ্যোক্তা। তবে ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক জরিপ অনুসারে দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ উদ্যোক্তার তুলনায় এই হার খুবই কম। পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার প্রায় ৭০ ভাগ ঢাকার বাইরে। কিন্তু এসএমই ফাউন্ডেশনের ঢাকার বাইরে কোন কার্যালয় নেই।

এমতাবস্থায় দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে আরও বেশি উদ্যোক্তাকে ঋণের আওতায় আনা, এসএমই নীতিমালা ২০২৫ বাস্তবায়ন এবং এসএমই খাত ও উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। সেই সাথে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

মূল প্রবন্ধে এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসএমইবান্ধব (ট্যাক্স, ভ্যাট ও ট্যারিফ সংক্রান্ত) প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৩৪টি অ্যাসোসিয়েশন এবং ৫টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে ৫টি পরামর্শ সভা এবং ১টি কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩০০-এর অধিক প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তাদের প্রস্তাবনা পর্যালোচনাপূর্বক মূসক সংক্রান্ত ৩১টি, আয়কর সংক্রান্ত ৩৫টি এবং শুল্ক সংক্রান্ত ৬৭টিসহ প্রায় ১৪০টি প্রস্তাব চূড়ান্ত করে এনবিআর বরাবর দাখিল করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে অদ্যাবধি ৫৫৭টি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বরাবর প্রেরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন, যার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাবনা সরকার/এনবিআর কর্তৃক আংশিক/সম্পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছে এবং জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান উন্নত দেশগুলো এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক কম। পাকিস্তানে এই হার ৪০%, শ্রীলঙ্কায় ৫২%, চীনে ৬০%, ভারতে ৩৭%। বাংলাদেশে এই হার দেশের প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশের সিএমএসএমই উদ্যোক্তা ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসএমই নীতিমালা ২০২৫-কে ঘিরে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন, এই নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়নে সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বাস্তবায়ন সহযোগী মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করবে, যা শতভাগ শ্রমঘন এই খাতকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।