ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ঢাকা আসছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে তিনি ঢাকা সফর করবেন। ওই সফরে অভিবাসনের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হতে পারে। এছাড়া টেক্সটাইল, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সরকার-প্রধান এর আগে বেশ কয়েকবার রোম সফর করলেও এই প্রথমবারের মতো ইতালির কোনও প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার মারিয়া ত্রিপোদি গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করে বাণিজ্য, টেক্সটাইল, প্রতিরক্ষা, অভিবাসন, বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারপর মে মাসে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাতিও পিয়ানতেদোসি ঢাকা সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সফরে নিয়মিত অভিবাসন উৎসাহিত ও অবৈধ পথে অভিবাসন মোকাবিলা করার জন্য মাইগ্রেশন ও মোবিলিটি চুক্তি সই হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত ঢাকা সফরের বিষয়ে দুপক্ষ সম্মত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ে বিষয়টি চূড়ান্ত হয় যে তাদের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন।’

সফরে কী কী বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিশেষ করে টেক্সটাইল এবং প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য সহযোগিতা গুরুত্ব পেতে পারে।’

সফরে সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি সই হবে কিনা জানতে চাইলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশ কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ চলমান আছে। সফরের আগে বলা যাবে কয়টি সই হবে।’

অভিবাসন

ইউরোপে ইংল্যান্ডের পরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি থাকে ইতালিতে। প্রায় দুই লাখ বৈধ ও অবৈধ বাংলাদেশি সে দেশে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। ইতালি সরকার বৈধ পথে ও নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করতে চায়। একইসঙ্গে অবৈধ পথে অভিবাসন মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে পরামর্শ দিচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা ও রোমের অবস্থান অভিন্ন।

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বৈধ পথে অভিবাসনকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করছি। ইতালির ফ্লুসি ডিক্রি অ্যারেঞ্জমেন্টের অধীনে প্রতি বছর প্রায় চার হাজার বাংলাদেশির ওই দেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

এর পাশাপাশি ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে ফ্লুসি ব্যতীত বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সহযোগিতা আরও বাড়বে, যদি গোটা বিষয়টি বৈধ পথে হয়।’

দুদেশের মধ্যে মাইগ্রেশন ও মোবিলিটি সমঝোতার মাধ্যমে বৈধ পথে কর্মী পাঠানোর সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চুক্তির অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের ইতালিতে যাওয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে তাদের বেশি আয় করার সুযোগ তৈরি হবে।’

অবৈধ পথে বাংলাদেশিরা যদি ইতালি যায় বা যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে বৈধ পথে পাঠানোর সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ বলে তিনি জানান।

পুলিশ সহযোগিতা

অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলার জন্য ইতালির সরকার দুদেশের পুলিশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়াতে একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে চায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবপাচারের যে র‌্যাকেটগুলো রয়েছে, সেগুলোকে প্রতিহত করা এবং অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মানবপাচারে ব্যবহৃত রুটগুলোতে যেসব দেশ আছে, ওইসব দেশের সরকারের সঙ্গেও কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এছাড়া, মানবপাচারে জড়িত অপরাধীদের দায়বদ্ধতায় অধীনে আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

ইতালি বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন করে থাকে। ফলে রোমের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চায় ঢাকা। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ইতালি একটি সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা করছে।

এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মানসম্পন্ন প্রতিরক্ষা পণ্য উৎপাদন করে ইতালি। আমরা ছোট ছোট কিছু জিনিস কিনে থাকি। দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।