রাত পোহালেই ঈদ, দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ

রাত পোহালেই দেশজুড়ে উদযাপিত হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের আগের দিন শুক্রবার (৬ জুন) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি— মাংস কাটা ও সংরক্ষণের জিনিসপত্র কেনাকাটা, বাসাবাড়ি পরিষ্কার করা, মসলা তৈরি ইত্যাদি ব্যস্ততা।

সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলগুলো ক্রেতাশূন্য দেখা গেছে। ক্রেতা না থাকায় বিক্রয়কর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

তবে কাঁচাবাজার, মশলা ও মাংস কাটার সরঞ্জামের দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। অনেকে আবার গরু বা ছাগলের জন্য খড়, পানি ও দড়ি কিনেছেন। বাসাবাড়িতে শিশুরা তাদের প্রিয় কোরবানির পশুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদের নামাজ দেশের প্রতিটি মসজিদ ও ঈদগাহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। তবে আবহাওয়ার অবনতি হলে বিকল্প হিসেবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে কোরবানির হাট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘পূর্ণ প্রস্তুতি’ থাকার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, “নিরাপত্তা নিয়ে আমি পুরাভাবেই কনফিডেন্ট, আল্লায় দিলে শতভাগ কনফিডেন্ট, যেন কোনও ধরনের কোথাও কিছু না হয়।”

পাশাপাশি কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণে প্রস্তুত রয়েছে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসন।

কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণে বিস্তারিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। রাজধানীজুড়ে দ্রুত ও দক্ষভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত থাকবে বলে জানানো হয়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঈদুল আজহার দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মিশ্র আবহাওয়া থাকতে পারে। কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, আবার কোথাও থাকবে তাপপ্রবাহ ও গুমোট গরম। তবে দেশের বেশিরভাগ এলাকাতেই আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, ঈদের দিন ঢাকা বিভাগের পূর্বাঞ্চল, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের বেশিরভাগ জায়গায় আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক ও গরম।

ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এবারের ঈদে শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসব উদযাপন করতে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবারও প্রায় ১ কোটি মানুষ ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করবেন। এমন তথ্য উল্লেখ করে এ সময় ঈদযাত্রা ও কোরবানির পশুর হাটকেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

ফলে রাজধানী এখন কিছুটা ফাঁকা। যানজট ও কোলাহলহীন শহর যেন একদিনের জন্য হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে প্রশান্তির জায়গা।

মূল সড়কের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লার রাস্তাও ফাঁকা। শুধুমাত্র যারা রাজধানীতে ঈদ করবেন তারাই রয়ে গেছেন। কমেছে মানুষের কোলাহল, হকারের হাঁকডাক আর যন্ত্রযানের হুইসেল। নেই চিরচেনা যানজট।