ফের প্রশ্ন ফাঁসে আহমেদ নিলয়: ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার!

ফেসবুকে-ফের-প্রশ্ন-ফাঁস-হলোপরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই আবারও ফেসবুকে এইচএসসি’র প্রশ্নপত্র ফাঁস করলেন ছাত্রলীগ নামধারী আহমেদ নিলয় নামে এক ব্যক্তি।বৃহস্পতিবার জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) ও তত্ত্বীয় অংশের প্রশ্নপত্রটি ইমেজ (ছবি) আকারে আপলোড করেছেন। অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার জীববিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা শুরুর এক ঘন্টা আগেই প্রশ্ন ফাঁস করেন একই ব্যক্তি। এ বিষয়ে গতকাল বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমলে নিয়ে তদন্ত করছে জানালেও আজ আবারও প্রশ্ন ফাঁস হলো। তাহলে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কি ব্যর্থ সরকার? প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল।

আহমেদ নিলয় নামের ওই ব্যক্তি তার ফেসবুক পেজে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঠিক সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে আপলোড করেছেন।

তিনি তার ফেসবুকে বুয়েট ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তবে বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার তাদের সংগঠনে এই নামের কেউ নেই বলে দাবি করেছেন।

প্রশ্নপত্র আপলোড করে আহমেদ নিলয় তার ফেসবুক টাইমলাইনে বুধবার প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে বৃহস্পতিবার সকালে লিখেছেন, ‘সালা সাংবাদিকদের জন্য কিচ্ছু দিতে মন চায় না। অনেক বড় বিপদে আছি, তার পরও সাহায্য না করে পারলাম না। সবাই দোয়া করো। ইনশাল্লাহ যাতে তোমাদের পাশে থাকতে পারি। সকাল বেলা সবাইকে আগে প্রশ্ন টা ফ্রি দিলাম’।

আরও পড়তে পারেন: কিম অংবাংলাদেশকে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

এর আগে গত মঙ্গলবার তিনি তার টাইমলাইনে লিখেছিলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজকের সকাল বেলা প্রশ্ন সবাইকে ফ্রি দিলাম, শুধুমাত্র প্রমাণ দেওয়ার জন্য। পরীক্ষার হল থেকে এসে মিলিয়ে নিও। আর যারা আগের দিন ১০,০০০ টাকা দিতে পেরেছো তাদেরকে একদিন আগে এই প্রশ্নটা দিয়েছিলাম। ‎অনেকেই বিশ্বাস করতে পারো নাই তাদের কাছে প্রমাণ দেওয়ার জন্য দিলাম।’

বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে পেজে আরও লেখা হয়েছে, ‘এখন কিছু চিটার বাটপার আছে, যারা আমার ফ্রি দেওয়া প্রশ্নের কপি মেরে, ৫০০/১০০০ টাকা inbox বিক্রি করছে। এদের থেকে সাবধান হন, এবং চিটার বাটপার গুলিকে ধরতে সাহায্য করেন।’ তবে আহমেদ নিলয় তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি ফোন নম্বর(01955447307) দিয়ে প্রশ্ন নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে বলেছেন। কিন্তু ওই নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করেননি।

বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়া বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমি এখুনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছি’। এর আগে গতকাল বুধবার তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা বিটিআরসিকে জানিয়ে তদন্ত করছে’।

এদিকে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,পর পর দুটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলো? বিষয়টা আসলেই উদ্বেগ জনক। অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। না হলে জাতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এত কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য থেকে প্রশ্ন ফাঁস হলো, বিষয়টি খুবই শঙ্কার। তবে সরকারের উচিত হবে দ্রুত এই ব্যক্তিকে চিহ্নিত পূর্বক গ্রেফতার করে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো। ফাঁস হওয়া পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।

আরও পড়তে পারেন: সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে সরকারবিরোধী একটি মহলসাইবার ক্রাইম আতঙ্কে ক্ষমতাসীনরা

আজিমপুরের বাসিন্দা এইচএসসি পরীক্ষার্থীর এক অভিভাবক গোলাম রব্বানি বলেন, ‘আমাদের বাচ্চারা পরীক্ষা দিচ্ছে কিন্তু অবমূল্যায়িত হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের কারণে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে অমেধাবীরা এ+ পায় অথচ আমাদের সন্তানদের মত মেধাবীরা তাদের মেধার মূল্যটুকুও পায়না। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন এই অভিভাবক।

অন্যদিকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বুধবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, আমরা এখনই বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমানে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে যে ধরণের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি তাতে তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে মানতেও কষ্ট হয়। তবুও আমি অস্বীকার করছি না যে, সেটা একদমই অসম্ভব। তবে যদি প্রমাণিত হয় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তবে ফাঁসকারী চক্রকে দ্রুত ধরার ব্যবস্থা করবো এবং আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

/আরএআর/ এপিএইচ/