জ্বালানি তেলের দাম কমলো, গণপরিবহনের ভাড়া কমবে তো?

গণপরিবহনসব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমছে রবিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে। অর্থাৎ সোমবার প্রথম প্রহর থেকেই কার্যকর হবে জ্বালানি তেলের হ্রাসকৃত এই দাম। এখন প্রশ্ন উঠেছে, গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে। গণপরিহবনের ভাড়া আদৌ কমবে কিনা? যদি কমে,  তাহলে কী পরিমাণ কমবে?
রাজধানীতে চলাচলকারী বাসমালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের সভাপতি খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল রবিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে একটি বড় বাসে ডিজেল লাগে প্রায় ১০০ লিটার। জ্বালানির দাম কমায় এ ক্ষেত্রে মালিকদের সাশ্রয় হবে মাত্র ৩০০ টাকা। সে অনুযায়ী আপনারাই বলুন বাসভাড়া কত টাকা কমতে পারে?
খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল বলেন, অতীতে যতবার জ্বালানির দাম বেড়েছে, ততবারই আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। সরকারের নির্দেশনার আগে ভাড়া বাড়ানো যায়নি। এবার যেহেতু জ্বালানির দাম কমছে, সেহেতু সরকারের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ৭ এপ্রিল বিআরটিএ-এর সদর দফতরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমালে পরিবহন ভাড়াও কমবে। তেলের দাম যত টাকা কমবে, তত পয়সা করে পরিবহন ভাড়াও কমবে। অর্থাৎ জ্বালানির দাম এক টাকা কমলে পরিবহনে যাত্রীভাড়া কমবে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা। তিনি জানান, বিআরটিএ বিশ্লেষণের পর এই নিয়ম করেছে।

আরও পড়তে পারেন: জ্বালানি কমলো জ্বালানি তেলের দাম

 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল বলেন, জ্বালানির দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ কিসের ভিত্তিতে পরিবহন ভাড়া কমানোর ফর্মুলা বের করল সেটা আমাদের জানা নেই।

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বদিউজ্জমান বাদল রবিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, সরকার ডিজেলের মূল্য কমপক্ষে ১০ টাকা কমাবে।  কিন্তু তা না করে, কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই, ডিজেলের দাম কমালো মাত্র ৩ টাকা। জ্বালানির এই মূল্য হ্রাসে লঞ্চের যাত্রীভাড়ার ওপর কোনও প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল ডিজেলের দাম ১০-১২ টাকা কমবে। কিন্তু কমছে মাত্র তিন টাকা। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে এবার মালিকদের সাশ্রয় হবে মাত্র ৪০০ টাকা। অথচ মালিকরা আগে থেকেই সর্বনিম্ন ভাড়া পণ্য পরিবহন করে আসছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না কোনও ট্রাক মালিক ভাড়া কমাবে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার যে হারে জ্বালানির দাম কমাচ্ছে, তাতে সাধারণ যাত্রীদের উপকার হবে না। এর উপকার পাবেন মধ্যস্বত্বভোগী ও বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট মালিকরা। তিনি আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানির দাম কমানোর দাবি জানান।

জানা গেছে, গত ৩১ এপ্রিল ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটারে আঠার টাকা কমিয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর সর্বশেষ কমানো হচ্ছে লিটারপ্রতি পেট্রোল ও অকটেন ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন ৩ টাকা। রবিবার দিবাগত রাত থেকে কার্যকর হচ্ছে হ্রাসকৃত এ ভাড়া।

জানা গেছে, ডিজেলের দাম বাড়লে ডিজেলচালিত দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়ানো হয় ২০১৩ সালে। তখন যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করা প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪৫ পয়সা। এরপর জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়লে গত বছর ১ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীভাড়া বাড়ে ১০ পয়সা। সে অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয় বড় বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা।

আরও পড়তে পারেন:রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি কোনও কোম্পানি নয়: রওশন এরশাদ

অভিযোগ রয়েছে, সরকার যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও কোনও পরিবহনই তা মানছে না। মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো কয়েকগুণ বাড়িয়ে ভাড়া আদায় করে চলেছেন। বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বিআরটিএ-এর অভিযানকালে হাতেনাতে ধরেও ফেলেন। এরপরও বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।

জানা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এ সময় দাম বাড়ে লিটারপ্রতি পেট্রোল ও অকটেন ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন ৭ টাকা। এর ফলে জ্বালানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে ২০১৪ সালে জুনে। বিশ্ববাজারে কমলেও বাংলাদেশে জ্বালানির দাম কমানো হয়নি। এ জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ভর্তুকির লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার যুক্তি উপস্থাপন করে সরকার।

/এমএনএইচ/