হামলাকারীদের চাপাতির আঘাতে পারভেজের মাথা, কাঁধ ও হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। তিনি এখন বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বুধবার দুপুরে মাথার ক্ষতস্থান পরিচর্যা করার জন্য পাশের একটি হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে ওই বাসার সামনে কথা হয়।
পারভেজ মোল্লা জানান, ‘বিকালে চারজন লোক আসেন। তাদের হাতে দুইটি কার্টন ছিল। তারা আমাকে বলেন জুলহাজ স্যারের পার্সেল আছে দিতে হবে। আমি বলেছি, ভাই আপনারা এখানে দাঁড়ান, আমি অনুমতি নিয়ে আসি। এরপর আমি গেটের সিটকানি লাগিয়ে দোতালায় যাই। জুলহাজ স্যারের বাসায় কলিং বেল দেই। স্যার দরজা খুললে, আমি তাকে বলি স্যার আপনার পার্সেল আইছে। আমি কি পাঠিয়ে দেব? এরমধ্যে ওরা চারজন আমার পেছনে পেছনে উপরে যান। তাদের একজন স্যারকে কি যেন একটা নাম বলে পার্সেলের। স্যার তখন বলে আমারতো এই নামে কোনও পার্সেল আসার কথা না। আর পার্সেল যদি আসেও তাহলে আমি দেখে নেব।’
আরও পড়ুন-
পারভেজ মোল্লা বলেন, ‘এরপরই তারা জোর করে ভেতরে প্রবেশ করতে চান। স্যার বুঝতে পারছে, আমিও বুঝতে পেরে তাদের বাধা দেই। এসময় আমার কাঁধে ও মাথায় কোপ দেয়, আমি পরে যাই। তারা চারজনেই ভেতরে চলে যান। আমি প্রথমে কোপ টের পাইনি। পরে যখন রক্ত বের হয়েছে তখন বুঝতে পারি। এরপর দৌড়ে আমি চিৎকার করে নীচে আসি। গেটের পাশে নীরাপত্তাকর্মীদের রুমের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন সুমন খান (অপর নীরাপত্তাকর্মী), তিনি আমার চিৎকার শুনে জেগে উঠেন। তখন তাকেও ভেতরে একজন চাপাতি ধরেন, অপর একজন পিস্তল ধরেন। কেয়ারটেকার রহিম এসময় বাথরুমে ছিলেন, তাকেও ওই রুমের ভেতরে নিয়ে আটকে রাখেন। বাইরেও একজন লোক ছিলেন। আমি চিৎকার দিলে তারা গুলি করার হুমকি দেন।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘তারা উপরে পাঁচ মিনিটের মত ছিলেন। এরপর উপর থেকে চারজন নীচে নেমে আসলে একসঙ্গে সবাই চলে যান।’
পারভেজ বলেন, ‘ওদের কারও দাড়ি ছিল না, সবার পরনে নীল রঙের গেঞ্জি ছিল। প্রথমে ওরা চারজনই ছিল। অপর কয়েকজন মনে হয় সাইডে ছিল। আমি প্রথমে তাদের দেখিনি। কয়েকজনের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আমি ভেতরে একজনের কাছে পিস্তল দেখেছি। চারজনের কাছে ব্যাগ ছিল।’
‘ওরা বের হওয়ার সময় আমার কিছু স্মরণ ছিল না’ বলেও জানান পারভেজ মোল্লা।তিনি জানিয়েছেন,‘হত্যাকারীরা ৫ থেকে ৭ মিনিট বাসার ভেতরে অবস্থান করেছিলেন।’
অপর নিরাপত্তাকর্মী সুমন খান একমাস আগে ৩৬ লেকসার্কাস সড়কের এই বাসাটিতে চাকরি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একজন আমাকে চাপাতি ধরেছেন, আরেকজন পিস্তল ধরেছেন। চিৎকার করলেই গুলি করবেন বলে হুমকি দেন।’
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কলাবাগানে খুন হন ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার জুলহাজ মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় (২৮)। নিহত জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই। জুলহাজ বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। ‘রূপবান’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন তিনি। অন্যদিকে, তনয় আশা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেন। লোকনাট্য নামের একটি থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
/এআরআর/এপিএইচ/