কলাবাগানে জোড়া খুন

খুনিদের শনাক্তে ফুটেজ পর্যালোচনা করছে পুলিশ

জুলহাজ-তনয়রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় খুনিদের গ্রেফতারে ওই এলাকার বাড়িগুলোর সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজের সহায়তা নিচ্ছে পুলিশ।ইতোমধ্যে একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।এখন তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।এছাড়াও হত্যাকারীদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন,‘এই হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এর রহস্য উদঘাটন হবে। অপরাধীদের ধরে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো। সেজন্য আমাদের একটু সময় দিতে হবে। ইতিমধ্যে আমাদের তদন্ত দল চারদিকে মাঠে নেমেছে। তারা কাজ করছে।’
তিনি বলেন,‘সন্ত্রাসীরা চলে গেলেও পুলিশ তাদের একটি ব্যাগ রেখে দিতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে একটি পিস্তল,একটি মোবাইল,কিছু আরবি লেখা কাগজপত্র পাওয়া গেছে। যে পথ দিয়ে অপরাধীরা গিয়েছে সেখানকার কিছু ফুটেজও পাওয়া গেছে, যেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।’

আরও পড়তে পারেন: হজে অনিয়মে ৬৮ এজেন্সির সাজা হয়েছে: সংসদে ধর্মমন্ত্রী

২৫ এপ্রিল বিকালে রাজধানীর কলাবাগানে খুন হন ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার জুলহাজ মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় (২৮)।নিহত জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই। বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন তিনি। ‘রূপবান’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন তিনি। অন্যদিকে তনয় আশা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেন। লোকনাট্য নামের একটি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেল দেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে তাদেরকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লা গুরুতর আহত হন।খুনিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকার অন্যান্য বাড়িতে থাকা সিসি টিভির ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধরা পড়ে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যখন পুলিশ সদস্যরা তাদের জাপটে ধরেছিলেন, তখন পথচারীরা সহযোগিতা করলে সন্ত্রাসীদের আমরা ধরে রাখতে পারতাম।কিন্তু সেটা পারিনি। পথচারীরা কেউ সহযোগিতা করেননি। আমাদের এক পুলিশ সদস্য একজনকে জাপটে ধরেছিলেন। তাকে রাখতে পারেননি। তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে।’

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন,প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। হত্যাকারীদের অনেকেই দৌঁড়ে যেতে দেখেছেন,অনেকে তাদের ধাওয়া করেছেন। তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। টহলে থাকা পুলিশের সঙ্গে যে গলিতে গোলাগুলি হয়েছে সেই গলির কয়েকটি বাড়িতে সিসি টিভি রয়েছে। সেসব ফুটেজও সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপি কমিশনার।

আরও পড়তে পারেন: নিজের খেলাও দেখেন না মুস্তাফিজ!

তিনি বলেন,‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি আরও কয়েকটি দিক মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। তারা একটি সংগঠন করতো।সেখানে কোনও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সমস্যা অথবা কোনও সংঘবদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী ঘটনাটি ঘটিয়েছে কী না সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। দুই-চারদিন গেলেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব। কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। সব ডাইমেনশন মাথায় নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ।’

ঘটনার আরও কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় কাদের আসা যাওয়া ছিল সে ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নিচ্ছে পুলিশ। জুলহাজের বিষয়ে কেউ কারও কাছ থেকে কোনও তথ্য নিয়েছিল কিনা সেইসব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার দিন রাতে এই ঘটনায় নিহত জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও পুলিশের এসআই  শামীম আহমেদ আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।

/এআরআর/ /এমএসএম /