বার্তাটি হলো- ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আপনার সিম/রিম’র নিবন্ধন না করলে সংযোগটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফ্রি নিবন্ধন সম্পন্ন করতে আজই আপনার সিম/রিম এবং এনআইডি নিয়ে রি-রেজিস্ট্রেশন পয়েন্টে আসুন।
এই ধরনের ভয়েস বা এসএমএস একেবারেই যে সুখকর তা কিন্তু নয়। আর খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এই ধরনের সতর্ক বার্তাগুলো। অসহ্য বিরক্তিকরও মনে হয়। কিন্তু এই নিবদ্ধন পদ্ধতি নিয়ে অনেকেরই শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়। আর সব আশঙ্কাই যে ভিত্তিহীন তাও কিন্তু নয়। কিছুটা যৌক্তিকতাও আছে।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা আছে, ‘গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিয়ে যে সিম/রিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে কোনোভাবে এটি অপব্যবহার করা না হয়’।
আবার নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ এবং একই সঙ্গে যদি কোনও গ্রাহকের আঙুলের ছাপের অপব্যবহার হয় তাহলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে রায়ে।
বিষয়টা হলো- এত নিরাপত্তা থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। রীতিমত দেশের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়েছিল। মাঠ পর্যায়ে নানান মানুষের উদ্বেগের কথাও শোনা গেছে। তার ওপর আবার রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের মন্তব্য মানুষকে আরও আশাহত করেছে।
আরও পড়তে পারেন: প্রচণ্ড চাপে সিম নিবন্ধনে সমস্যা হচ্ছে: তারানা হালিম
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম/রিম’র নিবন্ধন না করলে যে সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে- সে কথা বারবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বললেও বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া ১৩ কোটি ১০ লাখ সিম ও রিমের সক্রিয় ৮ কোটির মধ্যে ৬ কোটি ৩৫ লাখেরও বেশি সিমের পুনঃনিবন্ধন হয়েছে।
অন্যদিকে ৬২ লাখেরও বেশি গ্রাহকের আঙুলের ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে না মেলায় আতঙ্কে আছেন তারাও। আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহ এবং ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের অনেকের তথ্য নিয়ে তাদের এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র না দেওয়ায় তাদের সিমগুলো কীভাবে পুনঃনিবন্ধিত হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছুও বলতে পারছে না অপারেটরগুলো।
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ‘বায়োমেট্রিক ভ্যারিফিকেশন সিস্টেমে’র মাধ্যমে গ্রাহকদের সংযোগ রেজিস্ট্রেশন/ভ্যারিফিকেশন/রি-অ্যাক্টিভেশন/রি-রেজিস্ট্রেশন/রিপ্লেসমেন্ট/ডি-অ্যাক্টিভেশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার অপরিহার্য উল্লেখ করে মোবাইল অপারেটরগুলোকে চিঠি দেয় বিটিআরসি।
আরও পড়তে পারেন: রিজার্ভ চুরির বেশিরভাগ অর্থই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই: অর্থমন্ত্রী
“তবে যুক্তিগ্রাহ্য কারণে কোনও গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্ত না হয়ে থাকলে তাকে পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/জন্ম নিবন্ধন সনদের বদলে ৬ মাসের জন্য সংযোগ দেওয়া যেতে পারে বলা হলেও বায়োমেট্রিক মেশিনে এনআইডির তথ্য ছাড়া অন্য কোনও অপশন না থাকায় এজেন্ট ফিরিয়ে দিচ্ছে এনআইডি না থাকা গ্রাহকদের। সেই সঙ্গে কোনও কোনও এজেন্ট গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাও।
আমি মনেকরি, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাধ্য-বাধ্যকতা তৈরি না করে আরও কিছুটা সময় বর্ধিত করার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম/রিম পুনঃনিবন্ধনে হুমকি-ধামকি ও বিতর্কিত মন্তব্য না করে আরও ক্যাম্পেইন, আরও জনসচেতনা বৃদ্ধি করা একান্ত জরুরি। সেই সঙ্গে প্রাইভেসি বা নিরাপত্তার ব্যাপারে দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করা। খুব সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে এনআইডি হালনাগাদ করার ব্যবস্থা এবং কতিপয় এজেন্ট কর্তৃক গ্রাহক থেকে রি-রেজিস্ট্রেশন ফ্রি নেওয়া বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে সিম/রিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যেতে পারে।
লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মোবাইলফোন রিচার্জ অ্যান্ড ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন