কাটছে না সংকট

সরকারি হাসপাতালে নার্স নিয়োগে ‘হযবরল’

সরকারি হাসপাতালে নার্স নিয়োগে ‘হযবরল’, সহজে কাটছে না সংকট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ নার্সের ঘাটতি রয়েছে। অপরদিকে ‘ডিপ্লোমা ইন নার্সিং’ এবং ‘বিএসসি ইন নার্সিং’ -এ ডিগ্রি নিয়েও প্রায় ২১ হাজার ৫শ’ নার্স  বেকার রয়েছেন এই মুহূর্তে। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলোতে নার্স সংকট চরমে। কিন্তু সহসাই এ অবস্থার উত্তরণে সরকারের কোনও পদক্ষেপ নজরে আসছে না। একদিকে নার্সদের চলমান আন্দোলন, অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে সরকারি হাসপাতালে নার্সিং সেবার ঘাটতি কমাতে ১০ হাজার নার্সের পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেন। এর আগে দুই ধাপে ব্যাচ-মেধা-জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রায় ৬ হাজার ৫শ’ জন নার্স নিয়োগ দেয় সরকার। চলতি বছরে আরও তিনহাজার ৬শ’ নার্স নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।

এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরনো নিয়ম থেকে সরে এসে প্রতিশ্রুতি ভেঙে পরীক্ষার নিয়ম চালু করে।  ৩ জুন (শুক্রবার) এর পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং আন্দোলনে পুলিশ দিয়ে নিপীড়ন চালিয়েছেন অভিযোগ তুলে পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন নার্সদের বড় একটি অংশ।

তবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, প্রায় ৮০ শতাংশ পরীক্ষার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু নার্স নেতা এবং বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির (বিবিজিএনএস) সভাপতি রাজীব কুমার বিশ্বাস জানান, মাত্র ৩৫ শতাংশ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির (বিবিজিএনএস) সাধারণ সম্পাদক নাহিদা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত ১ মে তার বাসায় আমাদের দাবি মেনে নেন এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিপিএসসির নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তারপরও কেন আমাদের ওপর পুলিশ এবং বহিরাগতদের দিয়ে হামলা করা হলো। তারা আমাদের নামে এখন মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, আমাদেরকে পিটিয়ে আমাদের নামেই মিথ্যা মামলা দেওয়ায় এখন আমরা পুলিশি নজরদারিতে রয়েছি।

তিনি আরও বলেন, গত ২ জুন রাতে পুলিশি হামলার পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে আমাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের মারধর করেছেন, এমনকি গাছের ডাল ভেঙে তারা আমাদের কয়েকজনকে পিটিয়েছেন।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিষয়টি মানবিক, কিন্তু সরকারি নিয়মে আমরা বাঁধা। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়- এটা সরকারি নিয়ম। আমরা এর বাইরে যেতে পারি না।

তিনি আর বলেন, আমাদের অনুরোধেই পিএসসি শুধুমাত্র নার্সদের ক্ষেত্রে এমসিকিউ এবং মৌখিক মোট ২০০ নম্বরের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। এর বেশি সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকে করা সম্ভব নয়। এসময় নার্সদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশও করেন তিনি।

নার্স নেতা এবং বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির (বিবিজিএনএস) সভাপতি রাজীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ৯৮ শতাংশ নারী অধ্যুষিত একটি পেশায় নিয়োজিত নারীদের গত ২ জুন রাতে পুলিশ যেভাবে মেরেছে তার প্রতিবাদ করার কোনও ভাষা নেই আমাদের। এতে তিনমাসের অন্তঃসত্তা একজন মায়ের গর্ভপাতও হয়েছে। আমাদের দুইজন গ্রেফতার রয়েছেন, প্রায় পঞ্চাশ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত সাতজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, নার্স নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২ জুন রাতে নার্সরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসার সামনে বিক্ষোভ করতে গেলে সেখানে পুলিশি হামলার শিকার হন তারা।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রকাশিত নার্স নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ব্যাচ-মেধা-জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নার্স নিয়োগের এক দফা দাবি নিয়ে গত দুই মাসেরও বেশি সময় কর্মসূচি পালন করেছে বিডিবিএনএ (বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন) এবং বিবিজিএনএস (বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি)। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি মেনে নিলেও বিপিএসসি তাদের পরীক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং গতকাল ৩ জুন নার্স নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন: 

নির্বাচনি সহিংসতায় প্রাণহানি প্রসঙ্গে সিইসি: মানুষের জীবনের দাম কমে গেছে

ইউপি নির্বাচনের শেষ ধাপেও ঝরে গেলো তিন প্রাণ

/জেএ/এমও/এপিএইচ/