জঙ্গি টার্গেট এখন আরও স্পষ্ট ও সংহত

জঙ্গিদের টার্গেট হয়ে প্রাণ দিয়েছেন যারাজঙ্গি সম্পৃক্ততায় এখন পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার কোনওটাই টার্গেটহীন কিলিং নয় বলে মনে করেন জঙ্গিবাদ গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে এসে জঙ্গিগোষ্ঠী টার্গেট করার ক্ষেত্রে আরও বেশি স্পষ্ট ও সংহত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দলগুলো সব সময় তাদের ঘোষিত শত্রুপক্ষ এবং শত্রুপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত পক্ষকে আক্রমণ করেছে। এগুলো মোটেই বিচ্ছিন্ন হামলা নয়।
আরও পড়তে পারেন: হত্যার আগে মোটরসাইকেলে ঘুরঘুর করছিলেন তিন যুবক
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিরতি দিয়ে একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনায় শিক্ষক, পীর, লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, পুলিশ সদস্য, শিয়া অনুসারী, সমকামী অধিকারকর্মী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুদি দোকানি পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় জঙ্গিদের ‘টার্গেট’ ও এর কারণ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলেও একটু লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হবে, জঙ্গিরা কেন তাদের টার্গেট করছেন এবং তাদের উদ্দেশ্যটা কী।
গত ১৮ মাসে ৪৫টি জঙ্গি হামলার ঘটনায় মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ সদস্যসহ খুন হয়েছেন ৪৭ জন। সর্বশেষ রবিবার চট্টগ্রামে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। এটিই প্রথম কোনও পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের ওপর হামলা। তবে এর দায় কেউ স্বীকার করেনি।

নিউ মিডিয়া এবং জঙ্গিবাদ গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট নির্ঝর মজুমদার মনে করেন, জঙ্গিরা হয় আতঙ্ক ছড়াতে চায় না হলে জনসমর্থন আদায় করতে চায়। ব্লগার বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বা সমকামী সমর্থকদের হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে জঙ্গিরা তাদের একটা ‘পজিটিভ ইমেজ’ তৈরি করতে চেয়েছে। এখন যখন নিরাপরাধ একজন ধর্মপ্রাণ মানুষকে তার স্বামীর কারণে হত্যা করা হলো, তখন তিনি তাদের টার্গেট হন পুরো পুলিশ প্রসাশনের মনোবল ভাঙার জন্য। তারা লক্ষ্য হাসিলে টার্গেট নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আরও বেশি স্পষ্ট ও সংহত হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দারের ওপর যখন প্রথম আক্রমণ হয়, তখন সবাই ভেবেছিল নাস্তিক ব্লগাররা টার্গেট। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিমনা শিক্ষক ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হলো। কিন্তু এই সুনির্দিষ্ট টার্গেট থেকে বেরিয়ে প্রকাশক, পীর, মুদির দোকানদার হত্যায় দৃশ্যত কোনও কারণ ও সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়তে পারেন:  খানজাহান বিমান বন্দর প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে যাচ্ছে

একের পর এক টার্গেট কিলিং আসলেই এলোমেলো নাকি জঙ্গিদের অন্য কোনও হিসাব আছে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে জার্মানির হাইলব্রন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসিব মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দলগুলো সব সময় তাদের ঘোষিত শত্রুপক্ষ এবং শত্রুপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত পক্ষকে আক্রমণ করেছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন হামলা নয় মোটেই। হত্যা ও হামলার শিকার হওয়া ব্লগার, ধর্মত্যাগী, বিধর্মী, স্বধর্মী কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বীরা তাদের ঘোষিত লক্ষ্য এবং বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা হলো ঘোষিত লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত পক্ষ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আইসিস এবং আল-কায়েদার কার্যক্রম খেয়াল করলে এই দুই ধরনের লক্ষ্যই নজরে পড়ে। বাংলাদেশে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার সঙ্গে সঙ্গে তারা লক্ষ্যগুলোও সম্প্রসারিত করছে। এই সম্প্রসারণের জন্য তাদের কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সবাইকেই ধীরে ধীরে আক্রমণের শিকারে পরিণত করছে।

এখনকার কিলিংগুলোর টার্গেটের ধরন নিয়ে পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখনকার টার্গেট দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। জঙ্গিরা কাকে টার্গেট করবে তাদের হিসাব-নিকাশ একদম ঠিক আছে। তবে কে টার্গেট হবে, কাকে সাবধান থাকতে হবে সেটা আপনি জানেন না। আমাদের দিক থেকে তাদের ঠেকানোর বিকল্প নেই। স্বীকার করতেই হবে কিলিং মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা রয়েছে।

আরও পড়তে পারেন: পুলিশকে দুর্বল করা সম্ভব নয়: মনিরুল ইসলাম

ইউআই /এমএসএম/এজে