বাংলা ট্রিবিউনকে এসপি বাবুল আক্তারের শ্বশুর

এসব করা হচ্ছে মিতু হত্যার তদন্ত ভিন্নখাতে নিতে

এসপি বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেননিহত মাহমুদা খানম মিতুর বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর খবর’ প্রচার হওয়ায় তা এই হত্যার তদন্ত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন এসপি বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন,  মিতু হত্যার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে মামলার বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার তদন্ত সঠিক জায়গা পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে মনে করি না। রবিবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার নিজ বাসায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সব হত্যারই ন্যাচারাল একটি বিচার আছে। মেয়ে হত্যার বিচার নিয়ে হতাশ নই। প্রকৃত খুনিরা ধরা পড়বে। তাদের বিচার হবেই। তাই নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি বা গ্রেফতার করা না হয়, কোনও আসামিকে ক্রসফায়ারে দেওয়া না হয়, এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাই।
মিতু হত্যায় স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জড়িত থাকা ও তাদের দাম্পত্য কলহের বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল খুবই মেধাবী ও ভালো অফিসার। তার অনেক কাজ এরইমধ্যে প্রশংসনীয় হয়েছে। এজন্য হয়তো পেশাগত শত্রুরা তার পেছনে লাগতে পারে। তারাই গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর প্রচার করিয়েছে।  সব পেশাতেই কে কাকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবে, এখন সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।

দাম্পত্য কলহের ব্যাপারে মোশাররফ হোসেন বলেন, এমনটি হলে সামান্যতম হলেও কানে আসতো। বাবা হিসেবে কখনোই মনে হয়নি তাদের মধ্যে কোনও দাম্পত্য কলহ আছে। মেয়ে-কিংবা মেয়ের জামাইয়ের মধ্যে কখনোই এমন কোনও আচরণ দেখতে পাইনি। এগুলো অপপ্রচার।

বাবুল আক্তারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল রাতে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়েছেন। তার দুই শিশু সন্তানও শনিবার দিনভর বাবা-মায়ের জন্য অনেক কান্নাকাটি করেছে। বিকেলে আসার পর তাদের সান্ত্বনা দিতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তাকে। দু’দিন বাইরে থাকায় বাবুলও ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া তিনি আপাতত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না বলেও জানিয়েছেন। আমাকেও কথা বলতে বারণ করেছেন বাবুল। তারপরও আমি আপনাদের সঙ্গে দু’চার কথা বলি। কেন কথা বলতে বারণ করেছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে কথা না বলার নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত ৫ জুন স্ত্রী মিতু হত্যার পর থেকে মাহির ও তাবাছছুম নামের দুই শিশু সন্তান নিয়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার রাজধানীর মেরাদিয়া ভূঁইয়া পাড়ার শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন। ঘটনার পর থেকেই ওই বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। একজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের পুলিশের একটি দল বাবুল আক্তারের শ্বশুর বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। বাড়ির সামনেই চেয়ার পেতে রাত-দিন তারা দায়িত্ব পালন করছেন।

মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন ও খিলগাঁও থানার ওসি আনোয়ার হোসেন আইজিপি’র কথা বলে গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে মেরাদিয়ার শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে যান। নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর থেকে তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক কোনও কথা না বলায় চতুর্দিকে গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেলে বাবুল আক্তারকে মেরাদিয়ার শ্বশুর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুবুল আলম। এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া ও গণমাধ্যমে তাদের দাম্পত্য কলহ এবং মিতুর পরকীয়ার কাহিনি প্রচারের খবরে স্বজনরা  ক্ষুব্ধ।

রবিবার সকালে বাবুল আক্তারের শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও দেখা যায়, পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইনের নাম ধরে ঘরের ভেতরে বাড়ির নারী সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। একইসঙ্গে মিতুর সঙ্গে বাবুলের সুসম্পর্কের কথাও বলছিলেন। রবিবার সকাল ১০টার দিকে ওই মেরাদিয়ার ছেলের শ্বশুর বাড়িতে আসেন বাবুল আক্তারের বাবা আবদুল ওয়াদুদ। তিনিও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি কোনও কথা না বলে ঘরের ভেতরে চলে যান।

সর্বশেষ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, তদন্তের স্বার্থে আইন মেনে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন: মিতু হত্যা মামলায় দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

/এমএনএইচ/