আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ ও তামিম চৌধুরীর কথোপকথন

আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ ও তামিম চৌধুরীনব্য জেএমবির প্রধান সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের সঙ্গে তামিম চৌধুরীর কথোপকথনের কিছু তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরীর আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট যখন অভিযান চালায় সেসময় এই দুজনের মধ্যে কথোপকথন হয়। বিশেষ একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করে। শাইখ আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের আশুলিয়ার আস্তানা থেকে তা উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, ‘কথোপকথনে শাইখ আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের কাছে তামিম নির্দেশনা চেয়েছে। এতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয় আবু ইব্রাহীম তামিমেরও বস। এছাড়া আস্তানা থেকে আরও অনেক ডকুমেন্টস উদ্ধার করা হয়েছে। যাতে বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে গেছে।’

র‌্যাব সূত্র জানায়, গত ২৭ আগস্ট রাত ২টা ২৩ মিনিটি ৩৯ সেকেন্ডে তামিম বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে আবু হানিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। ওই মুহূর্তে কাউন্টার টেরোরিজম তামিমের নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার আস্তানা ঘিরে ফেলে।

এ সময় তামিম চৌধুরী আবু হানিফকে সালাম জানিয়ে ওই কথপকোথনে বলে ‘ভাই, আছেন? এদিকে তাগুত (জঙ্গিদের ভাষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী) এসেছে। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। আমরা ফাইটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভাই আমরা আল্লাহর কাছে যাচ্ছি। আনুগত্যে ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন। আর আপনারা কাজ চালিয়ে যান। যে প্ল্যানগুলা করসি সব কাজে লাগায়েন।’

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, কথোপকথন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ওই মুহূর্তে শাইখ আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ অনলাইনে ছিলো না। রাত ৩টা ২ মিনিটে সে প্রথম তামিমের কথার উত্তর দেয়।

আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ ও তামিম চৌধুরীর কথপোকথনআবু হানিফ: ‘বলো, কি হয়েছে?’

তামিম চৌধুরী: ‘ভাই আমাদের জন্য দোয়া করেন। ওরা বাইরে পজিশন নিয়ে আছে। ভাই, আমরা আল্লাহর কাছে যাচ্ছি।’

আবু হানিফ: ‘কয়জন এসেছে?’

তামিম: ‘ফুল সোয়াত। আমরা সব কাগজ জ্বালিয়ে দিয়েছি।’

আবু হানিফ: ‘কে নিয়ে আসলো?’

আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ ও তামিম চৌধুরীর কথপোকথনতামিম: একজন জঙ্গি। তবে ওই জঙ্গি সদস্য বাইরে এখনও জীবিত এবং বাইরে থাকায় র‌্যাব সদস্যরা তার নাম প্রকাশ করেনি।

আবু হানিফ: ‘পিসির হার্ড ডিস্ক নষ্ট করেন। আর সব আইডির নাম চেঞ্জ করেন। ফল (জঙ্গিদের ভাষায় ফল অর্থ গ্রেনেড) আছে তো ভাই?’

তামিম: ‘জ্বী, ভাই ফল আছে। সিম আর ফোনটা কি নষ্ট করবো নাকি আরও ওয়েট করবো?’

আবু হানিফ: ‘ভাই, এখনই নষ্ট কইরেন না।’

তামিম: ‘ভাই, ওরা তো এক রাউন্ড গুলিও করছে। দরজার সামনে ওরা আছে। ওরা ওয়াকিটকিতে কথা বলছে।’

আবু হানিফ: ‘দরজায় একটি ফল সেট কইরা ফাটান।’

তামিম: ‘আমরা কি ফোনের সিম ডেস্ট্রয় (ধ্বংস) করে দিবো?’

আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ ও তামিম চৌধুরীর কথপোকথনআবু হানিফ: ‘না, আপনারা ফল মেরে ফাইট শুরু করেন। তারা ওয়েট না করলে ফল ফাটায়া হিট শুরু করে দেন।’

তামিম: ‘পুলিশের হাতে নিহত না হয়ে নিজেদের লোকদের হাতেই মারা যাবে কিনা? (তামিমের ওই আস্তানায় ফজলে রাব্বী ও তওসিফ নামে আরও দুই জঙ্গি সদস্য ছিল, যারা তামিমের সঙ্গেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়।? আমাকে শহীদ হইতে হবে। দুই জনের কেউ একজন আমাকে গুলি করুক। পরে ওরা ফাইট করুক।’

আবু হানিফ: ‘আপনি তাগুদের হাতে শহীদ হন। সেইটা ভালো হবে। সবাই হিট করেন। শহীদ তাদের হাতে হন। ছামান ও ফল নিয়ে আক্রমণ করেন।’

অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও সদস্যদের তথ্যও পেয়েছে র‌্যাব

র‌্যাব সূত্র জানায়, আবু ইব্রাহীম আল-হানিফের আস্তানা থেকে পাওয়া ডকুমেন্টস ও কথোপকথন থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নব্য জেএমবির হাতে থাকা অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সদস্যদের সম্পর্কে তথ্যও রয়েছে। তাদের মোট সদস্য সংখ্যা ৩শ’ এবং বিশটি সেমি হ্যান্ড গান, ৯টি অটো রাইফেল, আইডি ও হ্যান্ড গ্রেনেড রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের অপর একটি কথোপকথনে ম্যানপাওয়ার উল্লেখ করা হয় ৬৩ জন। সাতটি হ্যান্ড গান, ৪টি মোটরসাইকেল ও একটি মিনি ট্রাক। অক্টোবর মাসে আবু হানিফের সঙ্গে অপর একজন জঙ্গিও সঙ্গে কথোপকথনে একটি একে ২২ রাইফেল, ৫টি হ্যান্ড গান, ৩৩ জন ম্যানপাওয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন সুরা সদস্য, ৬টি ব্যাচ, ১০ জন আশকারী সদস্য ও ২টি যানবাহন রয়েছে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘জঙ্গিদের কথোপকথনে স্পষ্ট হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হওয়ার ফলে নব্য জেএমবির সদস্য সংখ্যা কমে আসছিল। অনেক অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। একারণে ক্রমশ তাদের জনশক্তিসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদও ফুরিয়ে আসছিল। বর্তমানে জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নেই বললেই চলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট যে জঙ্গিরা দেশের বাইরে থেকে অনুদান নেওয়ার পাশাপাশি দেশের ভেতর থেকেও অনেকের কাছে অনুদান নিয়েছে। এছাড়া সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যদের ইয়ানত দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। পুরো অর্থ গচ্ছিত থাকতো আব্দুর রহমানের কাছে। সেই বিভিন্ন সেলগুলোর কাছে অর্থ বণ্টন করে দিতো।’

/এনএল/এসএনএইচ/