বলবো কি বলবো না: লিট ফেস্টে কাঠগড়ায় সেন্সরশিপ

রুদ্ধস্বরের আলোচনায় আলোচকরা

 

বাংলাদেশের সংবিধানে যে কয়টি মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া আছে,তার একটি হলো বাক স্বাধীনতা। কিন্তু তারপরেও কেন বারবার উঠছে বলার স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গে? শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে এমন প্রশ্ন দিয়ে ‘রুদ্ধস্বর বলতে কেন বাধা’ নামের সেশনটি শুরু করেন সাংবাদিক হারুন উর রশিদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক প্রভাষ আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষিকা রাশেদা রওনক খান, ব্লগার ও লেখক আরিফ জেবতিক এবং লেখক অধিকার এবং বাক-স্বাধীনতা বিষয়ক সংগঠন পেন বাংলাদেশের মহাসচিব সৈয়দা আইরিন জামান। দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং প্রাসঙ্গিকতার কারণে সেশনটিকে গোটা উৎসবের সবচেয়ে প্রাণবন্ত সেশনগুলোর একটি হিসেবে ধরা যায়।

বাক-স্বাধীনতার সংজ্ঞায়ন নিয়ে সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য শুরু করেন সাংবাদিক প্রভাষ আমিন। তার মতে,চাইলেই কি সব বলা যেতে পারে? বলা হয়, আমার স্বাধীনতা আপনার নাক পর্যন্ত বিস্তৃত। একদম যা খুশি বলার অধিকারও থাকা উচিত নয়।

প্রভাষ আমিনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ব্লগার আরিফ জেবতিক। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ তো আছেই ,  বর্তমান ৫৭ ধারার অধীনে চাইলে ইন্টারনেট কানেকশন আছে এমন যে কাউকেই গ্রেফতার করা যায়। ৫৭ ধারা বলছে,  একটা লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে যদি ২ বছর কারাদণ্ড হয়,তাহলে অনলাইনে সেটা প্রকাশিত হলে ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। প্রবীণ লেখক শামসুজ্জোহা মানিক ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জেলখানায় পচে মরছেন,তাকে দেখতে যাওয়ার মতো লোকটিও নেই। রাষ্ট্রের এমন নিপীড়ক আচরণের পর নিজে সেলফ সেন্সর করলে বলার মতো আর কিছু আসলে থাকবে না । কোনও কিছু কাউকে আহত করবে , এমন চিন্তা করে মত প্রকাশ থামিয়ে রাখলে তা শুভ কিছু বয়ে আনবে না। জেবতিক আরও যোগ করেন, ব্লগার খুন হওয়ার পরে অনেক বোদ্ধাই প্রশ্ন তুলেছেন,ওরা এসব লিখতে গেলো কেন। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আপনাকে লিখতে হবে। এ পর্যায়ে মাঝে মাঝে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতাধরেরা ইসলামি চিন্তাবিদ হয়ে যান বলে যোগ করেন আলোচনার সঞ্চালক হারুন উর রশিদ।

সঞ্চালক হারুন উর রশীদ

বাংলাদেশে লেখক ও ব্লগারদের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৈয়দা আইরিন জামান বলেন,৫৭ ধারা বলছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে।  এবং সেই গ্রেপ্তার হয় জামিন অযোগ্য। অনেক সময় ল্যাপটপে ফেসবুক খুলে কোথাও গেলে চাইলে কেউ আপনার ফেসবুকের ওয়াল থেকে কিছু শেয়ার করতে পারে। এ ঘটনাও ইতিমধ্যে ঘটেছে।  তিনি আরও বলেন,এই ৫৭ ধারা আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী,সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের পরিপন্থী। ভারতে ৬৬(এ) নামের যে বিতর্কিত ধারাটি ছিলো,সেটা দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। আমরা ৫৭ ধারা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমালোচনা করে  বলেন, পেন বিডির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার উত্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে,কেউ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানালে তারা সহযোগিয়তা করবেন। অথচ ব্লগার নিলাদ্রী নীল তার মৃত্যুর আগে নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে পুলিশ তাকে বিদেশ চলে যাওয়ার কথা বলে।

আলোচনার এক পর্যায়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাক-স্বাধীনতার ব্যাপারে নিজেদের মত প্রকাশ শুরু করেন অংশগ্রহণকারীরা। শ্রোতাদের অনেকেই সাংবাদিকদের দায়িত্বহীনতা এবং ‘টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন অনেক শ্রোতা। এছাড়া ব্লগার হত্যাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বিদেশের মাটিতে আশ্রয়লাভের জন্য মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগও ওঠে।

/এফএএন/