একফোঁটাও হাসি নেই নজরুলের স্ত্রী বিউটির

নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি

দীর্ঘ সময় আদালতে বসে থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের রায় শুনে গুমরে কেঁদে ওঠেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। চেহারায় উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট, তখনও ধাতস্থ হতে পারেননি। টেলিভিশনের অসংখ্য ক্যামেরার সামনে গিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে প্রায় নির্লিপ্তভাবে বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট। এখন উচ্চ আদালতেও যেন এ রায় বহাল থাকে, সেই প্রত্যাশা করি।’

ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা বাদী হয়ে সেসময়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নূর হোসেনসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেছিলেন।তারপর চলে গেছে কয়েক বছর।স্বামীর নিথর শরীর দেখে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন এই নারী। আজ  রায়ে চোখের সামনে বড় বড় সেনা কর্মকর্তাকেও ঘায়েল হতে দেখে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতেও যেন এ রায় বহাল থাকে। এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’

যখন এসব কথা বলছিলেন তিনি, ঠিক পাশেই তার বাবা সকলের পরিচিত শহীদ চেয়ারম্যান কথা বলছিলেন আর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন সাংবাদিকদের সামনে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট নই। এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ ছিল তাদের মধ্যে দুজনকে চার্জশিটভুক্ত করা হয়নি। চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত তারা পালিয়ে ছিল। চার্জশিটে নাম নেই শুনে আবার এলাকায় ঢুকছে কয়েক মাস হলো। তারপর থেকে আমাদের ওপর অত্যাচার থেমে নেই।’

নজরুলের স্ত্রী বিউটির কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি তাড়াহুড়ো করে আলাপ শেষ করতে চান। কান্নায় ফুলে ওঠা চোখ সরিয়ে নিয়ে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমার এবিষয়ে বলার নেই।’

বিউটি আরও বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে আমি যে অসহনীয় কষ্ট ও দুঃখের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি,আজকের রায়ে কিছুটা হলেও সেই কষ্ট লাঘব হবে হয়তো। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই।’ পাশ থেকে তার এক স্বজন বলে ওঠেন, ভিকটিম পরিবারগুলোর কী ভয়ানক দুরাবস্থা। হাসিখুশি বিউটি আপার মুখে কয় বছরে হাসি দেখি না। মেনে নেওয়া কঠিন।

বিউটির চোখে চোখে তাকিয়ে আবারও জানতে চাই,তারপরও আপনার কি কিছুই চাওয়ার নেই? তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে দাবি জানাবো, এই রায় দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে আদালত থেকে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন।তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ।কী কষ্ট দিয়ে মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। সেই বীভৎসতা মনেও করতে চায় না পরিবারগুলো। বিউটি বলেন, ‘আসলে কারও ক্ষত কেউ শুকিয়ে দিতে পারে না। আমারতো প্রতিটা দিন অসহনীয় কাটে, আপনার নিশ্চয় তেমন না। আমি কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি বিচার চেয়ে। আমি কেবল আল্লাহকে বলেছি, ফিরিয়ে দেবে না জানি, বিচারটা হলে বুক হালকা হবে।দোয়া করবেন। শেষ বিচারেও যেন এই রায়ই বহাল থাকে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি হয়েছে, এর বিচার নিয়েও কম শঙ্কা ছিল না। সেসব পেরিয়ে আজকের অবস্থান কিছুটা স্বস্তিকর।’ কান্নাভেজা ভাঙা কণ্ঠে তারপরও বলেন,‘আমি সত্যিই খুশি।’

/ইউআই /এপিএইচ/

আরও পড়ুন:  

ডেথ রেফারেন্স যাবে হাইকোর্টে

নূর হোসেন ও র‌্যাবের কমান্ডার তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড