‘ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ একটি বিরল রোগ। রোগটি জিনগত, তবে সংক্রামক নয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়, মাংসপেশি জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যায়। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পঙ্গু হয়ে যায় রোগী। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশিদিন বাঁচে না, আর রোগটি নিরাময়যোগ্যও নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এসব তথ্য।
এখন তিনি জানতে পেরেছেন, এ রোগ থেকে সেরে ওঠার কোনও সম্ভাবনা নেই। তোফাজ্জল নাতি ও ছেলেদের কষ্ট আর সইতে পারছেন না। তাই গত ১৯ জানুয়ারি মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, রাষ্ট্র যেন তাদের চিকিৎসার ভার গ্রহণ করে। নইলে তাদের মৃত্যুর অনুমতি চেয়েছেন তিনি।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম আলমগীর জানালেন, ‘ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ আক্রান্ত রোগী কখনওই সেরে ওঠে না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে মানিকগঞ্জে এই রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের পাঁচ/ছয় জনকে পাওয়া গিয়েছিল। আমরা তাদের ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। কিন্তু বেশি কিছু করা যায়নি। এ রোগে আক্রান্তরা পুরোপুরি সুস্থ হয় না।’
রোগটির লক্ষণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘এ রোগে আক্রান্তদের মাসল (মাংসপেশি) গ্রো করে না। যে কারণে একেক সময় শরীরের একেকটা অঙ্গ দুর্বল হতে শুরু করে। মাংশপেশি ডিসট্রফি হয়, পায়ে হলে হাঁটতে পারে না, শক্ত হয়ে যায়, হাতে হলে কিছু ধরতে পারে না।’
এই রোগে আক্রান্তদের আরও বেশ কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে এসএম আলমগীর বলেন, ‘এসব রোগী কোনও কাজ করতে পারে না বলে এক ধরনের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন। দেখা গেছে, কোনও পুরুষ এতে আক্রান্ত হলে তার সন্তানদের শরীরেও এই রোগ দেখা দেয়। এটি সম্ভবত বংশগত রোগ। আমরা এর রুট বের করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।’
এসব রোগীর বেশিরভাগই অপুষ্টিতে ভুগছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তাদের পুষ্টি খুব দরকার। এই বিরল রোগ নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া দরকার। এই রোগের প্রতিষেধক কিংবা কিভাবে এদের সুস্থ করে তোলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।’
রোগটি যে নিরাময়যোগ্য নয়, তা জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহও। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই রোগ একেবারেই কিউরেবল (নিরাময়যোগ্য) না। চিকিৎসা করলে হয়তো একটু আরাম হয়, কিন্তু এই রোগ সেরে যায় না। মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দরকার হয়, কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় না।’
ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘মাংসপেশিদুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে রোগী একসময় প্যারালাইজড হয়ে যায়, তারপর মৃত্যু হয়। এরা সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ বছর বাঁচতে পারে। রোগটি নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত, রোগের ওষুধ নিয়েও ভাবা দরকার।’
/এএআর/আপ- এপিএইচ/
আরও পড়ুন:২ সন্তান ও নাতির মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন!