১৭ শিশুকে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

র‌্যাবের হাতে আটক শিশু অপহরণকারী চক্রের সদস্যরাভয়ংকর শিশু পাচারকারী ওরা ছয় জন। দুই বছরে অপহরণ করেছিল ১৭ শিশুকে। এদের মধ্যে আট জনকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। ছয় শিশুকে পাচার করেছে বিদেশে। হত্যার পর নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে দুই শিশুর। সর্বশেষ এক শিশুকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। বায়েজিদ নামে ওই শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়েই র‌্যাব চক্রটির সন্ধান পেয়েছে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে ওই ছয় পাচারকারীর চক্রটি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাচারকারীদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো— জাকির হোসেন (৫৫), জাকিরের স্ত্রী মর্জিনা বেগম ওরফে বানেছা (৪০), টিটু (২৯), মোহাম্মদ হোসেন সাগর ওরফে বেলু ওরফে দেলু (২২), জেসমিন বেগম (৩৭) ও আসলাম ওরফে আলামিন (২৮)। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, দুইটি চাকু, একটি চাপাতি, এক হাজার ২০ পিস ইয়াবা, অপহৃত শিশুদের অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত ২৩টি চেতনানাশক ইনজেকশন, দুইটি ব্যবহৃত ইনজেকশন, ১৪টি সিরিঞ্জ এবং ১৭টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশু পাচারকারী এই চক্রটি ভয়ংকর। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলানো হচ্ছে।’
র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন ডালিম নামে এক নারী র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়ানের কাছে তার ৮ বছর বয়সী ছেলে বায়েজিদ অপহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অপহরণকারীরা বিভিন্ন সময়ে ফোনে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। মুক্তিপণ না দিলে বায়েজিদকে হত্যার হুমকিও দেয়। পরবর্তীকালে র্যা ব গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে ১৮ জানুয়ারি চিটাগং রোড এলাকা থেকে বায়েজিদকে উদ্ধার করে। সেসময় অপহরণকারীদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
র‌্যাবের হাতে আটক শিশু অপহরণকারী চক্রের সদস্য বাম থেকে জেসমিন, মর্জিনা, টিটু ও জাকিরর‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, অপহরণকারীদের ধরতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শুরু করে র‌্যাব। পরে ৭ ফেরুয়ারি সকাল ১১টা থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকার জনপদ রোড এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ বাগমারা এলাকা থেকে ছয় অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা শিশু বায়েজিদকে অপহরণের কথা স্বীকার করে। একইসঙ্গে তারা আরও অন্তত ১৭টি শিশু অপহরণের কথাও স্বীকার করে নেয়। তারা জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ শিশু অপহরণ ও পাচারকারী দলের সদস্য। শিশু অপহরণের উদ্দেশ্যে তারা যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোড এলাকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং ঢাকা সদরঘাট এলাকায় ছদ্মবেশে মাইক্রোবাসে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে ফাঁকা কোনও এলাকায় কোনও শিশু পরিবার থেকে সামান্য বিচ্ছিন্ন হলেই তাকে মাইক্রোবাসে তুলে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করে রাখে।
র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, অপহৃত শিশুদের সোজা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ নিমাই কাশারী এলাকায় অপহরণ চক্রের দলনেতা জাকিরের বাসায় নিয়ে যেত। সেখানে আটকে রেখেই স্বজনদের কাছে মুক্তিপণের জন্য অর্থ আদায় করা হতো।
গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা গত দুই বছরে ছয়টি শিশুকে বিদেশে পাচার করেছে। তারা অপহরণের পর শিশুদের বিদেশে পাচারের জন্য বর্তমানে ওমানে অবস্থানকারী সিন্ডিকেট সদস্য শাহবুদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করত। শিশুদের তারা নিজেদের সন্তান ও অন্যান্য কৌশলে বাহকের মাধ্যমে বিদেশ পাঠাত। প্রত্যেক শিশু পাচারের জন্য তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেত তারা।
র‌্যাব সূত্র জানায়, অপহরণের পর কখনও কখনও মুক্তিপণ পেলেও অপহৃত শিশুদের ফেরত দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হত্যা করতো ওই চক্রটি। দু’টি শিশুকে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দিয়েছে বলেও স্বীকার করে নিয়েছে চক্রটি।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, গত দুই বছরে তারা মুক্তিপণের বিনিময়ে যে আট শিশুকে ছেড়ে দিয়েছিল তারা হলো— বরিশালের ইমন, ঝালকাঠির রাকিব হোসেন ইরান, ভোলার আবু সুফিয়ান নিলয়, ফরিদপুরের রিয়াজুল কবির, ঢাকা যাত্রাবাড়ির সানি, গাজীপুরের জুবায়ের ইসলাম, বরিশালের নাজমুল ও মেহেদী। বিদেশে পাচার করা শিশুরা হলো হৃদয়, সুমন, আনন্দ, বরিশালের আলামিন, শুভ ও ইমন। র্যা ব কর্মকর্তাদের ধারণা, এই চক্রটি আরও বেশকিছু অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

আরও পড়ুন-

রাজধানীর ফুটপাতে চাঁদাবাজি: ৭২ জনের বিরুদ্ধে ৩ মামলা

আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ছাত্রাবাসে আগুন

/টিআর/