পাঁচ বছরে সবাই ওদের ভুলে গেছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার আমরা পাব না। এই বিচার আর হবে না। এখন ভরসা ওপরওয়ালা। অনেক কিছুই তো হলো, অনেক বিচার হলো। কিন্তু সাগর-রুনির কথা সবাই ভুলে গেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টেলিভিশনে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এরপর থেকে তদন্ত চলছে। একের পর এক তদন্ত সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তিত হয়েছে। সব কর্মকর্তাই পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, আশার বাণী শুনিয়েছেন। তবে পাঁচ বছরেও রহস্যের কূল কিনারা মেলেনি।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নিজ বাসায় কথা হয় মেহেরুন রুনির মায়ের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও বিচার হবে না। হলে পাঁচ বছরে হয়ে যেত।’ মেয়ে হত্যার কারণ জানতে চান কিনা বা এখনও বিচার পাওয়ার অপেক্ষা করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করি না। কী হবে জেনে!’
ঠিক পরের কথাতেই স্পষ্ট হয়, বিচার না চাওয়ার কথাটি বলেছেন ক্ষোভ আর হতাশা থেকে। এরপর আর প্রশ্ন করতে হয় না, রুনির মা বলতে থাকেন, ‘আমার সাগর-রুনি আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই সাধারণ ছিল। কে তাদের হত্যা করতে চাইবে? তাদের তো কোটি কোটি টাকা ছিল না যে, কেউ হত্যা করে টাকা নিয়ে যাবে। আর টাকার জন্য মানুষকে মানুষ এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করে না। এত এত তদন্ত হলো, আর এই হত্যার তদন্ত কেউ করতে পারল না?’
রুনির হত্যার দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে মা নুরুন্নাহান বলেন, ‘ওরা দু’জন অফিসে গেলে মেঘ আমার কাছে থাকত। সেদিন মেঘকে নিয়ে পিকনিকে গিয়েছিলাম। স্কুলের পিকনিকের গাড়ি আমাদেরকে মোড়ে নামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা বাসা চিনে ফিরতে পারছিলাম না। আমার সেদিন কী যে হয়েছিল, মায়ের মন বলেই মনে হয় বিপদ টের পেয়েছিলাম। আমরা অনেকক্ষণ পাড়ার অলিতে-গলিতে ঘুরে তারপর নিজেদের বাড়ি চিনতে পেরেছি। সকালে ছোট শিশু মেঘ মা-বাবার লাশ দেখে না জানি কী কষ্টটা পেয়েছিল! আজও তা বলে উঠতে পারেনি। তবে কেউ না কেউ তো তাকে (মেঘকে) দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছিল, তারা কারা?’
কেমন আছে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ— প্রশ্ন করতেই নুরুন্নাহার মির্জা বলেন, ‘আমাদের মতো বয়স্ক মানুষও পাঁচ বছরে নিজেদের মনকে বুঝাতে পারছি না, আর মেঘ তো কোলের শিশু। ও মাঝে মাঝে লুকিয়ে কাঁদে, সেটা আমি টের পাই। কিন্তু আজও কিছু বলে না আমাদেরকে। সামনে থেকে দেখলে মনে হয়, স্বাভাবিকই আছে। কিন্তু মন খুলে কথা বলে না, ভীষণ চাপা।’
মেঘ কখনও বাবা-মায়ের কথা জানতে চায় কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে মেঘের নানী বলেন, ‘না, কখনওই জানতে চায় না। কী জানতে চাইবে! আমরাও কোনও প্রশ্ন করি না, বাচ্চাটা কিছুই পেল না। তাকে খুঁচিয়ে দুঃখ বাড়ানোর কোনও মানে হয় না।’
কেন তদন্তের এই অবস্থা বলে মনে করেন জানতে চাইলে নওশের বলেন, ‘অবাক হতে হয় যখন দেখি একের পর এক তদন্ত সংস্থা, তদন্ত কর্মকর্তা বদলে যায়। আবার একজন তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে পরের তদন্ত কর্মকর্তার কাজের কোনও ধারাবাহিকতা নেই। আমরা শেষের দিকে এসেও এমন প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি যে, নিজেরাই অবাক হয়ে গেছি।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/টিআর/এপিএইচ/