তামাক পণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বাণী বাস্তবায়নের হার অর্ধেকেরও কম!

সতর্কবাণী প্যাকেটের ছবির ওপর দিকে দেওয়ার কথা, কিন্তু দেওয়া হয়েছে নিচেআইন বাস্তবায়ন হয়েছে প্রায় এক বছর হলো। কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি তামাক পণ্যেই আইন মেনে শতভাগ সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণী মুদ্রিত হয়নি। কমদামি সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে এই আইন প্রতিপালনের হার আরও বেশি হতাশাজনক। অথচ কমদামি তামাক পণ্যগুলোর ভোক্তা মূলত অক্ষরজ্ঞানহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
এদিকে, তামাক পণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক হলেও বিষয়টি শতকরা ৩১ শতাংশ বিক্রেতারই জানা নেই। আর ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ বিক্রেতা জানেন না, তিন মাস পরপর এই সতর্কবাণী পরিবর্তনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মানুষের জন্য বেশি ফলপ্রসূ।
জানা গেছে, ধূমপান ও তামাক পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন (সংশোধিত ২০১৩) এবং ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ণের পর গত বছর ১৯ মার্চ থেকে সব ধরনের তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়নের বিধান যুক্ত করা হয়েছে আইনে। এতে বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তল বা কোনও প্যাকেটে দুই পাশ না থাকলে সেসব প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অন্যূন শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী বাংলায় মুদ্রণ করতে হবে।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, আইনের প্রতিপালন সঠিকভাবে হচ্ছে না। তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা ও সীমান্তিক যৌথ এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। ‘তামাকপণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন বিষয়ক কমপ্লায়েন্স সার্ভে ফলাফল প্রকাশ ২০১৬’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফলে সিগারেটে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, জর্দায় ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ, গুলের ক্ষেত্রে ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও বিড়িতে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই শতভাগ আইন মেনে সচিত্র স্বাস্য্ সতর্কবাণী বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সিগারেটের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণে মানা হয় না আইনগবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শতকরা ৯২ শতাংশ তামাক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত শতভাগ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ না করেই তামাকপণ্য বিক্রয় করছে। আবার শতকরা ১৯ দশমিক ২ শতাংশ তামাকপণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ক্ষেত্রে এ আইনের বাস্তবায়ন খুবই উদ্বেগজনক। জর্দার কৌটায় শতকরা ৪০ দশমিক ২ শতাংশ এবং গুলের কৌটায় ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ কৌটায় স্বাস্থ্য সতর্কবাণী অনুপস্থিত।
অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর চিত্র খুবই ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ বিড়ির প্যাকেটে, ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ জর্দা এবং ৪২ দশমিক গুলের কৌটায় সঠিক স্থানে সতর্কবাণী দেওয়া হয়নি।
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা বলছে, তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার অন্যূন ৫০ ভাগ স্থানে আইনসম্মতভাবে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিতে বাধ্য করতে হবে। একইসঙ্গে আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীবিহীন এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে তামাকপণ্য বিক্রেতাদের সচেতন করতে হবে।
এদিকে, তামাক পণ্যের প্যাকেটের গায়ে সচিত্র সতর্কবার্তার বিষয়টি সম্পর্কে অনেক বিক্রেতারই জানা নেই। কোনও কোনও বিক্রেতা এ সম্পর্কিত আইন রয়েছে বলে জানলেও আইনের বিস্তারিত জানেন না। এ প্রসঙ্গে মগবাজারের এক সিগারেট বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা এটা জেনে কী করব? আমরা তো আর প্যাকেট করি না। আমাদের কাছে প্যাকেট যেভাবে আসে সেভাবেই আমরা প্যাকেট বিক্রি করি।’
তামাক পণ্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণে অনিয়ম প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক মো. রুহুল কুদ্দুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার নতুন করে ৬৪টি জেলার প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছি যেন তারা কঠোরভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। তামাক পণ্যের প্যাকেটে সচিত্র সতর্কবার্তা যে নিশ্চিত করা হয়, তা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে বলেছি।’ এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের নিয়ে যে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানেও বিষয়টি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তামাক পণ্যে সচিত্র সতর্কবার্তা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’
/টিআর/