একসময় পাহাড়ের বনে দেড়-দুইশ বছর বয়সী চম্পাফুল গাছ, আদি গর্জন, জারুল, জাম আর সেগুন গাছের দেখা মিলত। কিন্তু বনায়ন ধ্বংস, নতুন করে বনসৃজন বন্ধ, অবাধে গাছ কাটার পরিণতিতে শতবর্ষী এসব বৃক্ষ আজ বিলুপ্তির পথে।
পাহাড়ে বিভিন্ন বনাঞ্চল, বিশেষ করে রির্জাভ ফরেস্টে দেড়-দুইশ বছর বয়সী মাতৃবৃক্ষ ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি অঞ্চলে কাচালং রিজার্ভ রেঞ্জের অধীনে প্রায় ৪ লাখ একর বন রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের কাচালং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাচালং-সাজেক অংশ থেকে প্রায় ২শ বছর বয়সী চম্পা ফুল গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা। সাজেকে পর্যটন এলাকা গড়ে ওঠায় নতুন রিসোর্ট নির্মাণের কারণেই অবাধে চলছে চম্পা ফুল গাছসহ শতবর্ষী চাপালিশ, জাম, গর্জন, আদি জারুল, সেগুনসহ মূল্যবান কাঠের গাছ।
সাজেকের স্থানীয় আদিবাসী কারবারি মনা লুসাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিসোর্ট নির্মাণের জন্য গভীর বন থেকে গাছ কেটে বনেই সনাতনি কড়াত দিয়ে গাছ চেরা হচ্ছে। এসব গাছ থেকে পাওয়া কাঠ রিসোর্টের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক-দেড়শ বছর বয়সী চম্পা ফুলের কাঠ অনেক বেশি টেকসই। এসব গাছ লম্বা ৫০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হয়, প্রস্থে এগুলো ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক লকে (এক টুকরো কাঠ) প্রায় ৭০-৮০ ঘনফুট কাঠ হয়।’
একেকটি শতবর্ষী চম্পা ফুলের গাছ এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় বলে জানান মনা লুসাই। রিসোর্টের কাজ ছাড়াও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও অনেকে এই গাছের কাঠ ব্যবহার করে থাকেন বলে জানান তিনি।
কাচালং রির্জাভ ফরেস্টসহ রাঙামাটি জেলার বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ লাখ একর। এই এলাকার সবচেয়ে বড় রির্জাভ ফরেস্ট কাচালং সংরক্ষিত বন। এর আয়তন একসময় ছিল প্রায় ৪ লাখ একর, যার অনেকাংশই এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। দীর্ঘ বিস্তৃতি, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নজরদারির অভাবে ধ্বংস হচ্ছে বন। বন বিভাগের লোকবলের সংকটের কারণে বনের সার্ভে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। মাচালং-সাজেক অংশের বাঘাইহাট রেঞ্জের এক রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্ব ১১ জনের জনবল নিয়ে চলছে রেঞ্জটি। এ রেঞ্জের আয়তন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার একর।
মাতৃবৃক্ষ নিধনের কারণে একইসঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে বণ্যপ্রাণির আবাসস্থল। আর একসময় সাজেক-লক্ষীছড়ি-মাচালং রেঞ্জে প্রচুর পাখি চোখে পড়লেও বর্তমানে এই অঞ্চলে পাখির দেখা পাওয়া ভার। এছাড়া, আগে পাহাড়ে বুনো হাতির পাল, কয়েক প্রজাতির বানর, ধনেশ পাখি, সাম্বার হরিণ, বনরুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির বসবাস ছিল। বন ধ্বংসের কারণে এগুলোও আর চোখে পড়ে না। বন ধ্বংস হওয়ার পরিণতিতে কমে গেছে পাহাড়ের ঝিরিতে পানির পরিমাণও। শুষ্ক মৌসুমী ঝরনা-ঝিরিতে এখন পানি থাকে না বললেই চলে।
দেশের বিভিন্ন রিজার্ভ ফরেস্টের মাতৃবৃক্ষসহ বন রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন বন বিভাগের কঠোর নজরদারি ও স্থানীয়দের সচেতনতা। তা নিশ্চিত করতে না পারলে অবিলম্বে নিশ্চিহ্ন হবে পার্বত্য অঞ্চলের মূল্যবান প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
ছবি: জীবন চৌধুরী
আরও পড়ুন-
কুমিল্লার নামেই বিভাগের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন
/এফএনএ/টিআর/