কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে ভিড়!

মিরপুরে কুড়িয়ে পাওয়া কন্যাশিশুরাজধানীর মিরপুরে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন নানাশ্রেণির মানুষ। অনেকে আদালতের শরণাপন্নও হয়েছেন। তবে সে সুস্থ হওয়ার পর তাকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শিশুটির প্রতি সবার ভালোবাসায় বিড়ম্বনার মধ্যে আছেন বলে জানালেন নিউনেটোলজি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘শিশুটিকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আমরা রীতিমতো বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি। তাকে দত্তক নিতে প্রতিদিন আমাদের কাছে অনেকে আসছেন। আমরা তাদের বোঝাতে পারছি না, আমরা কেবল তার চিকিৎসা করছি। শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সেটা করতে পারি না।’
শিশুটিকে দত্তক নিতে ইতোমধ্যেই আদালতের কাছে আবেদন করেছেন অনেকেই। কিন্তু তাকে উদ্ধারকারী মো. বিপ্লব হোসেন যেহেতু কুড়িয়ে পেয়েছিলেন, তাই তিনিই এ অধিকার রাখেন বলে দাবি করেছেন। এ নিয়ে আদালতে শুনানি শুরু হবে বলেও জানা গেলো তার কাছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দুটি পুত্রসন্তান রয়েছে। তবুও এই শিশুটিকে লালন-পালন করতে চাই নিজের মেয়ের মতোই।’

এদিকে শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়ে দেশের উচ্চপর্যায়ের নানামহল থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান ঢামেক হাসপাতালের একটি বিশ্বস্ত সূত্র। কিন্তু সবাইকে আপাতত নিরাশ করতে হচ্ছে, কারণ তাকে দত্তক দেওয়ার ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেই সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন শিশুনিবাস কেন্দ্র থেকে শিশুটিকে নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. মনীষা ব্যানার্জী বলেন, ‘যথাযোগ্য প্রমাণ এবং নিয়ম মেনেই শিশুদের দত্তক দেওয়া হয় আদালতের মাধ্যমে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা কেবল তাকে সুস্থ করার দায়িত্বে নিয়োজিত। বাচ্চাটি আগে সুস্থ হোক, তারপর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

রবিবার (১৯ মার্চ) ঢামেক হাসপাতালের দোতলায় অবস্থিত নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তার জন্ডিস ও শ্বাসকষ্ট আগের চেয়ে অনেক কম। কিছুদিন পরই শিশুদের স্বাভাবিক ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হবে তাকে। অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, তবে সেটা ধীরগতিতে। আমরা এতেই সন্তুষ্ট।’

অপরিণত বয়সের শিশুটি নির্ধারিত সময়ে আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে জানিয়ে ডা. মনীষা বলেন, ‘কন্যাশিশুটির ওজন মাত্র ১ হাজার ৭০০ গ্রাম। যেখানে একজন নবজাতকের সাধারণ ওজন থাকে আড়াই থেকে চার হাজার গ্রাম। শিশুটির মুখে ঘা ছিল। জন্মের পর সে খাবারও পায়নি।’

প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ মিরপুরের নবাবেরবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহআলী থানা পুলিশ। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রাখা হয়। এখনও সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন-
একটি শিশুকে বাঁচানোর জন্য

ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো নবজাতক উদ্ধার

/জেএ/জেএইচ/