গ্রেফতার জঙ্গিদের কাছ থেকে খেলনা পিস্তল ও বিস্ফোরক উদ্ধার

গ্রেফতার ৫ জঙ্গিজঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সারওয়ার-তামিম গ্রুপের দুই প্রকৌশলীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদের বই,  খেলনা স্নাইপার ও পিস্তল, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, নগদ ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

আটক  ব্যক্তিরা হলো, অলিউজ্জামান অলি (২৮), আনোয়ারুল আলম (২৯), সালেহ আহাম্মেদ শীষ (২২), আবুল কাশেম (২৭) ও মোহন মহসিন (২০)।

মঙ্গলবার সকালে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘রাজধানীর বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ৫ জঙ্গিকে আটক করা হয়।’

তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক, বোমা তৈরির উপকরণ, জঙ্গিবাদী বই, ডামি পিস্তল ও বন্দুক, নগদ তিন লাখ ১৪ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

অলিউজ্জামান অলি একটি বহুজাতিক কোম্পানির প্রকৌশলী। সে বুয়েট থেকে পাস করছে। অলি কাফরুল এলাকার একটি জঙ্গি সেল পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। সে দলের সদস্যদের ইন্টারনেট পরিচালনা ও টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহারের উপর দীক্ষা দেয়। তার নেতৃত্বে দলের সদস্যরা ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকারীদের বিভিন্ন স্টাটাস ভাইরাল আকারে পোস্ট করে সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়ের উদ্দেশে প্রচারণা চালায়।

খেলনা অস্ত্র ও বিস্ফোরকঅলির সহপাঠী আনোয়ারুল আলম একই সময়ে বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে সে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করছে। সে অলির মাধ্যমে সারোয়ার ও তামিমের জঙ্গি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়। সে বোমা তৈরিতে পারদর্শী।

গ্রেফতারকৃত আবুল কাশেম ২০০৪ সালে মিরপুর ১৩ নম্বরের দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করে। সে পুরনো ঢাকার ফরিদাবাদ জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ সালে দাওরা হাদিস পাস করে। কাফরুলে বসবাসকারী কাশেম টিউশনি করে জীবিকা চালাতো। ২০১৬ সালে তার সঙ্গে অলির পরিচয় হয়। অলির মাধ্যমে আবুল কাশেম জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে।আরবিতে লেখা বিভিন্ন উগ্র মতবাদ   সে বাংলায় ভাষান্তর করতো । পরে তা নেটে ছড়িয়ে দিতো বলে র‌্যাব দাবি করে।

গ্রেফতারকৃত সালেহ আহাম্মেদ শীষ মিরপুর সেনপাড়া বায়তুল মামুর মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাস করে। এরপর সে মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়। মিরপুরে থাকার কারণে অলির সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। কাশেম চট্টগ্রামে একবছর আগে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়।  তার সঙ্গে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের আত্মীয়তা রয়েছে।

অপরদিক মোহন মহসিন মিরপুর এলাকায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৪ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসে চালকের সহকারী হিসাবে কাজ করতো। সে শিশু বয়স থেকেই কাফরুলে বসবাস করছে। জঙ্গি আবুল কাশেম তাকে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত করে। কাশেম তাকে উগ্রাবাদের বিভিন্ন ভিডিও দেখাতো।  ২০১৭ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সে পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে হিজরতে বের হয়। মহসিনও ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

খেলনা অস্ত্র, জিহাদি বই ও বিস্ফোরকএরা সবাই কাফরুল এলাকায় একটি জঙ্গি সেলের হয়ে কাজ করে। প্রায় ১৫ মাস যাবত তারা সবাই একত্রিত হয়েছে। তাদের সদস্য সংখ্যা ১০/১২ জন। এদের অধিকাংশ কাফরুল ও মিরপুর এলাকার বাসিন্দা।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপিরচালক (অপারেশন) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই জঙ্গি সেলটি মিরপুরের একটি সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এই নাশকতা পরিচালনার জন্য মনির এবং সালমান ওরফে আব্দুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু র‌্যাবের বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই সেলের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

/এআরআর/ এসএনএইচ/ এপিএইচ/

অারও পড়ুন: 

মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসির রিভিউ রায় প্রকাশ