রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান মেলেনি আজও

ধসে পড়া রানা প্লাজা, ছবি- সংগৃহীত‘শুধু লাশটা চাই। শেষবারের মতো ছেলেটাকে দেখমু। গোসল করায়া দাফন দিমু।’ এভাবেই আকুতি আর আহাজারি করছিলেন ববিতা বেগম। অভাবের সংসারে একটুখানি  সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে জন্য ববিতার ছেলে মনির হোসেন ঢাকার দোহার  থেকে এসেছিলেন সাভারে। কাজ করতেন রানা প্লাজার চার তলায় প্যানথম ট্যাক নামের গার্মেন্টসে।রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের তালিকায় রয়েছে ২৫ বছরের যুবক মনির হোসেনের নাম। দেখতে দেখতে চারটি বছর পার হয়ে গেলেও মা ববিতা বেগম এখনও পথ চেয়ে আছেন,তার ছেলে ফিরে আসবে।
ভবন ধসের খবর পেয়ে দোহার থেকে ছুটে আসেন সাভারে রানা প্লাজার সামনে। সেখান থেকে অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠ। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ  হাসপাতালের মর্গ এবং বেওয়ারিশ লাশের দাফনের কাজ করা আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামেও ছুটে গেছেন, কিন্তু কোথাও তার প্রিয় সন্তানের লাশের খোঁজ মেলেনি। এমনকি ডিএনএ’র নমুনা প্রদান ও টেস্টের পেছনেও অনেকদিন ব্যয় করেছেন মধ্য বয়সী এই নারী।তাতেও কোনও ফয়সালা হয়নি। তারপর ফিরে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। এখনও স্বজনরা ঢাকায় এলে তাদের কাছে সন্তানকে খুঁজে বের করার আকুতি জানান।
ববিতা বেগমের মতো আরও অনেকেই আজও খুঁজে ফেরেন তাদের প্রিয়জনদের। পাবনা জেলার আতাইকুলা এলাকার আছাব আলী খন্দকারের মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৮)। সাভার মজিদপুর মহল্লায় বড় বোন লিপি আক্তারের  ভাড়া বাসায় থেকে কাজ করতেন রানা প্লাজার প্যানথন গার্মেন্টসে। ভবন ধসের খবরে বড় বোন ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।কোথাও খোঁজ মেলেনি ফারজানার। রানা প্লাজায় হারিয়ে গেছেন তিনি চিরদিনের জন্য।

শনিবার দুপুরে নিখোঁজ ফারজানার বোন লিপি আক্তারের সঙ্গে কথা হয় রানা প্লাজার সামনে। ভবন ধসের চার বছর পার হয়ে গেলেও এখনও তিনি তার ছোট বোনের লাশ খুঁজে পাওয়ার আশা ছাড়েননি। বোনের ছবি হাতে নিয়ে ছুটে এসেছেন ধসে পড়া ভবনের সামনে। ক্ষোভের সঙ্গে জানান,ফারজানার লাশ  তারা খুঁজে পাননি। সরকার নামমাত্র কিছু ক্ষতিপূরণ দিলেও তাদের বাবা-মা আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ ভবন ধসের ঘটনায় জড়িতদের বিচার কাজ এখনও শেষ হয়নি। অবিলম্বে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার বিচার শেষ করে অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানান লিপি আক্তার । 

রংপুরের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী বেবী বেগম ছিলেন রানা প্লাজার ছয় তলায় ইথার টেক্স কারখানার মেশিন অপারেটর।ভবন ধসের দিনও কাজে এসেছিলেন তিনি। বেবী বেগম আজও নিখোঁজ রয়েছেন। স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা করেও কোনও হদিস পাওয়া যায়নি এই নারীর।তার স্বামী-সন্তানদের মুখেও একই কথা, তারাও  রানাসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের  শাস্তির চান।

উল্লেখ্য, সাভারে অবস্থিত রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধ্বসে পড়ে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় ওই ভবনে থাকা পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ ১১শ জনেরও বেশি প্রাণ হারান। ওই ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে গুরুতর আহত ও পঙ্গু হওয়ার পাশাপাশি নিখোঁজ হন অনেকেই।

/এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের বয়ান জানবে বিশ্ব

রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের ৪২ শতাংশ বেকার