‘পেটের ছেলেকে আমি চিনতেই পারিনি’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট‘আমার পেটের ছেলেকে আমিই চিনতে পারিনি, শেষে ছেলের পায়ের কেটে যাওয়া অংশ দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটাই আমার ছেলে’, বলেই কাঁদতে লাগলেন মা রাশিদা খাতুন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ আলী রেজার মা রশিদা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন এসব কথা।
এই বিস্ফোরণে আলী রেজাসহ আরও তিনজন আহত হন। তারা সবাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে চার জন দগ্ধ হয়েছেন। গত রবিবার (৩০ এপ্রিল) এলিফ্যান্ট রোডের একটি ভবনের নিচতলায় রঙের কাজ করার সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে।
আহতদের মধ্যে রং মিস্ত্রী মোনায়েম হোসেন জনির (৩৮) শরীরের ৩৪ শতাংশ, হোম এনজয় ডেভেলপার কোম্পানির পরিচালক উৎপল চক্রবর্তীর (৪৫) শরীরের ৩১ শতাংশ, অফিস সহকারী আলী রেজার (২৩) শরীরের ৩৬ শতাংশ ও মো. সোহেলের (৩৫) শরীরের ২৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে দগ্ধ উৎপল চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকার পেছনে ১২ তলার বসতি এলিগ্যান্স ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে হোম এনজয় ডেভেলপার কোম্পানির জন্য নতুন অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ওই অফিসে মোনায়েম রঙের কাজ করছিল। পাশেই ছিলাম আমরা তিন জন। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। একঝলকে আগুনের লেলিহান শিখা এসে আমাদের গায়ে লাগে। এরপর ধপ করে নিভে যায়। তখন আমরা চার জন দগ্ধ হই।’

দগ্ধ রং মিস্ত্রী মোনায়েম হোসেন জনি জানান, তিনি যেখানে কাজ করছিলেন তার পাশেই ছিল রিজার্ভ ট্যাংকের ঢাকনা। তার ধারণা, সেখানে গ্যাস জমে যাওয়ায় তা থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

গতকাল সোমবার ঢামেকে গিয়ে দেখা যায়, বার্ন ইউনিটের দোতলায় আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) সামনে বসে রয়েছেন আলী রেজার মা রাশিদা খাতুন। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। রাশিদা খাতুন বলেন, ‘অফিস সহকারী হিসেবে আলী রেজা সেখানে কাজ করলেও কয়েকমাস আগে সে কাজ ছেড়ে দেয়। কিন্তু সেখান থেকে তার পাওনা বাকি ছিল। গতকাল তাকে টাকা আনতে অফিস থেকে ফোন করা হয়। আমি নিষেধ করেছিলাম যেতে, কারণ এর আগেও তারা টাকা দেবার কথা বলেও টাকা দেয়নি। কিন্তু ছেলেটা কথা শুনলো না, বললো, যদি টাকাগুলো পাওয়া যায়, তাহলে সংসারের কাজে লাগবে। ছেলেটা সংসারের কথা চিন্তা করে আজ আইসিইউতে শুয়ে আছে।’

মা রাশিদা খাতুন শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মোছেন আর বলেন, ‘ছেলেটা পুড়ে যাবার পর ফুলে গেছে, মুখ দেখে চেনাই যায় না। কিন্তু ছোটবেলায় একবার তার পা কেটে যায় বটিতে, সেই কাটা জায়গা দেখে আমি ছেলেকে চিনতে পেরেছি, এমন ভাগ্য যেন কোনও মায়ের না হয়।’

আলী রেজার বোন এলিনা বলেন, ‘রেজা এসএসসি পাস করে আর লেখাপড়া করেনি। কয়েকমাস এই অফিসে কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে দেয়। কাল সেখান থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যার দিকে ফোন করে আমাকে বলে, তুই আয়।’ কিন্তু তার কথা স্পষ্ট ছিল না, জড়ায়ে যাচ্ছিলো। তিনবোনের পর আমাদের এ ভাই, বড় আদরের ছোট ভাই, সেই ভাইকে এ অবস্থায় দেখছি, বলেই কেঁদে ওঠেন এলিনা।

এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চার জনের কেউই এখনও আশঙ্কামুক্ত নন। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়াকে আমরা আশঙ্কাজনক বলেই অভিহিত করি, বাকিটা দেখা যাক।’

/এমও/