জানা গেছে, ঢাবির মৃত ওই শিক্ষার্থীর নাম আফিয়া জাহিন চৈতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বুধবার (১৭ মে) সকালে তিনি অধ্যাপক শেখ এ বি এম আব্দুল্লাহ’র অধীনে ভর্তি হন সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও চৈতিকে দেওয়া হয় ক্যান্সারের চিকিৎসা। বুধবার রোগীর রক্ত পরীক্ষার এক রিপোর্টে রক্তে ডেঙ্গুর উপস্থিতি ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দিনই অন্য এক রিপোর্টে ‘অ্যাকিউট মায়োব্লাস্টিক লিউকোমিয়া’ ধরা পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
চৈতির বড় ভাই নাফিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সকালে চৈতি ভর্তি হয় সেন্ট্রাল হাসপাতালে। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্ধ্যায় আমাদের জানানো হয় যে চৈতির ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে। রাত ৪টার দিকে ওর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিইউতে নেয় কর্তৃপক্ষ। পরে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টার দিকে আমাদের জানানো হয়, চৈতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল আমাদের ছাত্রীকে বলা হয়েছিল যে তার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। ছাত্রীর সঙ্গে থাকা বড় বোনকে বলা হয়েছে, ‘রোগীর ব্লাড ক্যান্সার। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন।’ অথচ আজ ১১টার পর বলেছে সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল।’
হাসপাতালের পরীক্ষায় স্পষ্ট ‘অ্যাকিউট মায়োব্লাস্টিক লিউকোমিয়া’ ধরা পড়েছে উল্লেখ করে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় স্পষ্ট লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের কথা লেখা আছে। অন্য কোনও রোগের কথা বলা ছিল না। এত স্ট্রং স্টেটমেন্টের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় অন্য রোগের আশঙ্কার দাবি টেকে না।’
চৈতির স্বজনরা বলছেন, দুপুরের দিকেই চৈতি ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ থাকলেও হাসপাতাল থেকে চৈতির মৃত্যুর খবর জানানো হয় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে। এরপরই চৈতির সহপাঠীরা এসে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এসময় তারা সেন্ট্রাল হাসপাতাল বন্ধ রাখা ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলসহ নয় দফা দাবি জানান। তাদের দাবির মধ্যে আরও রয়েছে হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, মৃত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার শাস্তি, ভুল রিপোর্টের শাস্তি, মৃত শিক্ষার্থীর বড় বোনের পড়ালেখার খরচ বহন এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর চিকিৎসা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিওর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ঘটনা তদন্তে আগামীকাল (শুক্রবার) তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি স্বীকার করছেন কিনা, জানতে চাইলে মতিওর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাফিলতির প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। গাফিলতি হয়েছে কিনা, তাও খুঁজে বের করব।’
ধানমন্ডি থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ভুল চিকিৎসায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে- এ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করবে বলে আমরা জেনেছি।’
/জেএ/টিআর/