গ্রিক দেবীকে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে: হেফাজত

 

হেফাজতগ্রিক দেবীর ভাস্কর্য জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থাপিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, ‘এই গ্রিক দেবীকে বাংলাদেশের কোথাও কোনোভাবেই স্থান দেওয়া যাবে না। এই গ্রিক প্রতীক, যেটা আমাদের দেশে একটা আবর্জনার মতোই, সেটাকে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে।’ শুক্রবার (২৬ মে)  বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে বাবুনগরী বলেন, ‘‘যারা বলছেন, থেমিস অপসারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরাজিত হয়েছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ।’ ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি যে বেতার ভাষণ দিয়ে বিজয় ঘোষণা করেন, সেখানে তিনি তার বক্তৃতা এই বলে শেষ করেছেন যে, ‘আমি, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব দেশবাসীকে আল্লার প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপনের জন্যে ও একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনে আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশ কামনা করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।’ দেখা যাচ্ছে, আল্লাহর সাহায্য কামনা করে যেই মুক্তিযুদ্ধের শুরু এবং আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। যে মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম চিন্তা হিসেবে প্রভাবশালী ভূমিকা বিদ্যমান ছিল, সেই মুক্তিযুদ্ধকে প্রকারান্তরে ইসলামের চেতনার বিরুদ্ধে যারা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে, কার্যত তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। তাদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও জোরালোভাবে সতর্ক থাকতে হবে।’

হেফাজত মহাসচিব  বলেন, ‘আমরা আমাদের ঈমান ও আকিদার জমিনে দাঁড়িয়ে এই ধার করা ঔপনিবেশিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধেই কথা বলেছি। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্র ধারণায় বিচার বিভাগের যে অবস্থান, দেবী থেমিস তারও পরিপন্থী। কারণ থেমিস গ্রিক সংস্কৃতির ডিভাইন ল’ বা তাদের ঐশ্বরিক আইনের প্রতীক। যে রাষ্ট্র নিজেকে আলাদাভাবে সেক্যুলার বলে পরিচয় দিয়ে নিজের কৌলীন্য জারি করে, সে রাষ্ট্র কিভাবে গ্রিক ঐশ্বরিক আইনের প্রতীককে নিজের বলে গ্রহণ করতে পারে?’

গ্রিক পুরাণ মতে থেমিস সোশ্যাল অর্ডার বা সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করেন উল্লেখ করে জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন, ‘তিনি শুধু ন্যায় বিচারই করেন না,  শক্তি প্রয়োগে সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করেন। থেমিসের হাতের তরবারি সেই শক্তি প্রয়োগের প্রতীক। আধুনিক রাষ্ট্র সামাজিকশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বিচার বিভাগকে দেয় না, বরং তা রাখে নির্বাহী বিভাগের হাতে। তাই, ঠিক কোন যুক্তিতে নিজেদের আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করা বাম সেক্যুলাররা থেমিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটা আমাদের কাছে ছিল বিস্ময়ের বিষয়।’

বাবুনগরী বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী গ্রিক দেবী থেমিসকে জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার পর লাগাতার প্রতিবাদী আন্দোলন ও শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচির পর গত মধ্যরাতে এটি অপসারিত হয়েছে। থেমিস অপসারণে বাংলাদেশের উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষের ন্যায় ভিত্তিক লড়াইয়ের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে।’

/সিএ/ এমএনএইচ/