বনানী থেকে নিখোঁজ যুবকদের খোঁজ মেলেনি

(বাঁ থেকে) ইমাম হোসেন ও কামাল হোসেনরাজধানীর বনানী থেকে একই দিনে নিখোঁজ তিন যুবকের এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি। তবে পুলিশ তাদের উদ্ধারে তৎপর আছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নিখোঁজ এক যুবকের স্বজন রশিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে তার সঙ্গে।’ তিনি একটি ভালো সংবাদ পাবেন বলে আশাবাদী। নিখোঁজ হওয়া তিন যুবক হলেন, কামাল হোসেন (২১), ইমাম হোসেন (২৭) ও হাসান মাহমুদ (২৬)।

বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবস্থান জানতে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রথমে তাদের অবস্থান ছিল বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি ও পরে তেজগাঁও এলাকায় কথা বলেছেন। সর্বশেষ যাত্রাবাড়ীতে গিয়েও তারা কথা বলেছেন। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।’

এসআই বজলুর রহমান বলেন,‘নিখোঁজ যুবকরা হয় কোনও জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়েছেন। নয়তো অন্য কোনও পক্ষ তাদের অপহরণ করেছে। তাদের  অবস্থান জানতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন,‘তিন জনের মধ্যে কামাল ৩ জুন সকালে এবং ইমাম ও হাসান একই দিন বিকালে নিখোঁজ হন। তারা একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। একই দিনে তাদের নিখোঁজ হওয়াটা রহস্যজনক।

কামালের মামা রশিদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ তার ভাগিনাসহ নিখোঁজ যুবকদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে।’  বৃহস্পতিবার পুলিশ কয়েক দফা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে  জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যদি কোনও জঙ্গি দলে জড়িয়ে থাকে, বা  কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের আটক করে থাকে, তারা যেন উদ্ধার হয় সেই কামনাই করি। তাদের মাধ্যমে যাতে দেশের কোনও ক্ষতি না হয়।’

রশিদ আলম বলেন, ‘নিখোঁজ কামাল কড়াইল বড় মসজিদের মেসে থাকতো। গত ৩ জুন সকালে সে মেস থেকে নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়। কিন্তু অফিসে যায় নি। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি জানতে বনানী গিয়ে কামালের বন্ধু ইমামকে ফোন করি। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ইমাম ও হাসান একসঙ্গে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় এসে আমাকে কামালের একটি ছবি দেয়। এরপর থেকে তাদের মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারি তারাও নিখোঁজ হয়েছে।’

কামাল নিউ ইস্কাটন এলাকার দিলু রোডের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ইমাম ও হাসান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাসের পর কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স  করেন। তারা তিন জনই একসঙ্গে বনানীর সি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৬৭/এ নম্বর বাড়ির (মোস্তফা ম্যানশন) পঞ্চম তলায় ইন্টারকম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টেলেক্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তিন জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত ৩ ও ৪ জুন রাজধানীর বনানী থানায় পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বৃহস্পতিবার সকালে আসন্ন ঈদ নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন যুবকের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অবহিত রয়েছি। এ ব্যাপারে র‌্যাবও তদন্ত করবে। ’

উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একই সঙ্গে চার যুবক নিখোঁজ হন। তারা হলেন- সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী হাওলাদার। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল মেহেদী হাওলাদারকে এবং ২৮ মে সুজন ও পাভেলকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দিয়ে যায়। তাদের কারা এবং কেন তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবিষয়ে কোনও তথ্য জানাতে পারেননি ফিরে আসা তিন যুবক। সাফায়েত এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকা থেকে কেয়ার মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান ফরহাদ ও ৫ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে সাঈদ আনোয়ার খান নামে আরও দুই তরুণ নিখোঁজ হন। তারা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

/জেইউ/ এপিএইচ/