‘আমগো ঈদের দাম সাড়ে তিনশ’, জীবনের দাম নাই’

উদিসা আপা-২বোচকাবাচকি ও কোলের শিশুসহ পুরো সংসার নিয়ে জামালপুর রওনা দিচ্ছেন সালেহা। ফুটপাতের জীবনে যা কিছু সম্বল সবটা নিয়েই যাচ্ছেন। ফিরবেন সপ্তাহখানেক পরে। সারা রোজার মাসে যত রকমের উপহার ‘দান’ (রাহেলার ভাষায়) পেয়েছেন সবটা নিয়েই গ্রামের বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ কাটাতে রওনা দিচ্ছেন। ছোট্ট একটা পিকআপভ্যানে চড়ে বসেছেন প্রাপ্তবয়স্ক ১৬ জন। তিল ধারণের ঠাঁই নাই। আর এই ছোটভ্যানে আবার অর্ধেকটাজুড়ে মালসামানা। যেতে সাড়ে চারঘণ্টা সময় লাগবে। ভাড়া সাড়ে তিনশ, শিশুদের ভাড়া নাই। যেকোনও দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। এ সময় সুমি নামের ২৫ বছরের একজন নারী বলেন, ‘আমগো ঈদের দাম সাড়ে তিনশ’, জীবনের দাম নাই।’

উদিসা আপা-৩িঈদের দিন দুপুরবেলা রাজধানীর পান্থকুঞ্জ এলাকার সামনে দাঁড়ানো এই পিকআপ ভ্যানের চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই জামালপুর শেরপুরের দিকের মানুষ, যারা বাসা বাড়িতে কাজ করেন কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি করেন, ঈদের দিন দুপুরের দিকে রওনা দেন। তিনি এটা জানেন বলেই সকাল থেকে এ এলাকায় আছেন। ১৬ জনের ভাড়া সাড়ে তিনশ’ টাকা করে আর মালসামানের জন্য আরও ৫০ টাকা বাড়তি।’

এভাবে গাদাগাদি করে পড়ে যাওয়া বা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ভরসা। এরা বাসে যেতে চাইলে ৬শ’ টাকা লাগবে। ট্রেনে গেলে দূরে নামিয়ে দেবে। আমি বাড়ির উঠানে নামাবো ইনশাল্লাহ।’

রাজধানীর পান্থপথ স্কয়ার হাসপাতালের সামনে দেখা মেলে আরেকটা ভ্যানের। এটি আগেরটি থেকে একটু বড়। লোক উঠেছে ২৭ জন। একইরকমভাবে বস্তাভর্তি সংসারের জিনিস আর শিশুরা কোলে আছেই। এ সময় নতুন লুঙ্গি পরে পিকআপের এককোণে বসে থাকা জামালপুরের রাশেদ সঙ্গে কথা হয়। এভাবে কেন যাবেন? ট্রেনে যান। জবাবে তিনি বলেন, ‘এভাবে গেলে কম টাকা লাগে, বাড়ির উঠানে নামিয়ে দেয়।’

উদিসা আপা-১ঈদের আগে যাননি কেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সকালবেলা ঈদগাহ এলাকায় অনেক ইনকাম হয়। বকসিস নিয়ে তারপর দুপুরের খাওয়া খেয়ে রওনা দিচ্ছি।’

পিকআপে কাসেম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। ফেরার সময় এই মালামাল সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বস্তাভর্তি সংসারের জিনিস। বাড়িতে মাকে দিয়ে আসবো। তিনদিন পর ফিরবো। আবার নতুন করে শুরু হবে জীবন। প্রতিবারই যাকিছু সংগ্রহ করি দিয়ে আসি। আশেপাশের বাড়ির জন্যও একটু একটু জিনিসপত্র আছে।’

উদিসা আপাএরই মধ্যে একজন সকলের চাপে মধ্যখানে বসে আছেন। নড়তে চড়তে পারছেন না। গায়ের নতুন শাড়ি দিয়ে রোদ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে গেলেতো আরও বেশি ভাড়া। আর ঈদের সকালের বকশিসটাও পাওয়া যেত না। আপনি আমাদের মরণের ভয় কেন দেখান। ঈদ করতে বাড়িতে যাইবাম। আমগো ঈদের দাম সাড়ে তিনশ’, জীবনের কুনো দাম নাই।’

একজন তৃপ্তি নিয়ে পান খেতে খেতেই বলেন, ‘ফোন নম্বর দেন, আইসা ফোনে রিং দেবো, তখনতো বুঝবেন বাঁইচা আছি।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/ইউআই/এসএনএইচ/