প্রসঙ্গত, ১০ মাস বয়সী তৌফা ও তহুরার জন্ম হয়েছিল পেছনের দিক থেকে সংযুক্ত হয়ে। তারা যেভাবে জোড়া লেগে জন্মগ্রহণ করেছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে পাইগোপেগাস বলা হয়। পাইগোপেগাস শিশু পৃথক করার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম বলেই জানান চিকিৎসকরা। প্রায় নয়ঘণ্টার সফল অপারেশন শেষে তাদের পৃথক করতে সক্ষম হন তারা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের রাজু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম নিজ বাড়িতে জোড়া লাগা দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কোমরের কাছে জোড়া লাগানো শিশু দুটির সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই আলাদা। শুধু প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা একটি। গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢামেকে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করা হয়।গত ১ আগস্ট তাদের শরীর আলাদা করা হলো।
শনিবার (৫ আগস্ট) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিশু দুটি এমনি ভালো আছে। প্রতিদিনই তাদের ড্রেসিং করা হচ্ছে, মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে, স্যালাইন বন্ধ রয়েছে।কিন্তু তৌফার চেয়ে তহুরা একটু শারীরিক সমস্যায় রয়েছে।
কী ধরনের সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন যখন তাদের ড্রেসিং করা হয় তখন তহুরার ক্ষত থেকে পানি আসছে, জায়গাটা ভিজে যাচ্ছে, তবে এটাকে সংক্রমণ এটা বলা যাচ্ছে না। তবে এতো ছোট শরীরে এতো বড় অপারেশনের পর পানি আসাটাও কিছুটা স্বাভাবিক। কিন্তু তৌফার ক্ষেত্রে সেটা আবার একেবারেই দেখা যাচ্ছে না, ওর ক্ষতস্থান ড্রাই (শুষ্ক) রয়েছে।
তারা এখনও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক বলেন, ওদেরকে আমরা এখনও আইসিইউ থেকে বের করছি না। কারণ, বাইরে ভিজিটর কন্ট্রোল করা যায় না, সেখানে নানারকম ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে বিষয়টা এমন না যে ওদেরকে চিকিৎসার প্রয়োজনে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বা তাদের আইসিইউ লাগছে। কিন্তু সংক্রমণ এবং অন্যান্য সবকিছু বিবেচনা করে তাদেরকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকাল আটটায় তৌফা ও তহুরাকে অজ্ঞান করা হয়। তার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ এ অস্ত্রোপচার শুরু হয়। বিকাল পাঁচটায় শিশু দুটিকে সফলভাবে আলাদা করেন চিকিৎসকরা। ঢামেকের প্লাস্টিক সার্জন, নিউরো সার্জন ও শিশু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডকে প্রায় ২০ থেকে ২২ জনের একটি দল এ অপারেশন সহায়তা করেন। সফল এ অপারেশনে যুক্ত ছিলেন প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক আবুল কালাম, ডা. তানভীর আহমেদ, ডা. লতা, ডা. গোবিন্দ, ডা. ফয়সাল ও ডা. হেদায়েত, নিউরোসার্জন অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার, ডা. রাজিউল হক, অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক শামসুজ্জামান, পেডিয়াট্রিক সার্জন ডা. শাহনুর ইসলাম, ডা. মোহাম্মদ মইনুল হক, অধ্যাপক আশরাফ উল হক কাজল, অধ্যাপক সামিদুর রহমান, অধ্যাপক কানিজ হাসিনা শিউলি, অধ্যাপক আবদুল হানিফ টাবলু। অ্যানেসথেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, ডা. রাবেয়া, ডা. শফিকুল আলম ও ডা. আতিক। এছাড়াও ছিলেন পেডিয়াট্রিক সার্জন তাহমিনা হোসেন, ডা. আল মাসুদ, ডা.পার্থ সারথি মজুমদার, ডা. গাফফার খান জিয়া, ডা. সনেট, ডা. কৌশিক ভৌমিক ও ডা. তাসনিম আরা।
/টিএন/আপ-এপিএইচ/