সাংবাদিকরা বেতন-মর্যাদায় সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে ৬ ধাপ পিছিয়ে

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএফইউজে মহাসচিব

সাংবাদিকরা অর্থ ও মর্যাদার বিচারে সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে ছয় ধাপ পিছিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ওমর ফারুক। জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকালে ‘অবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড চাই: বিভ্রান্ত ছড়ানো বন্ধ করুন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বেতন সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন। ওইদিন তিনি সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের দাবি টোটালি রাবিশ ও বোগাস বলেও মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএফইউজে’র মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনক্রম স্পেশাল গ্রেডে ৮৬ হাজার টাকা এবং শিক্ষানবীশদের বেতন ২২ হাজার টাকা। অন্যদিকে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতনক্রম স্পেশাল গ্রেডে ৩৫ হাজার ৮৭৫ টাকা, শিক্ষানবীশ ১২ হাজার ৬০০ টাকা। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন স্কেলের ৬ নম্বর গ্রেড থেকে সাংবাদিকদের গ্রেড বেতন শুরু হয়েছে। অর্থাৎ শুধু অর্থের বিচারে নয়, মর্যাদার বিচারেও সাংবাদিকরা সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে ছয় ধাপ পিছিয়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন ও রোয়েদাদ ঘোষণার জন্য আমাদের অনেক দিন ধরে আন্দোলন করতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দাবি অনুযায়ী নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হচ্ছে না। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায়  রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ আমাদের দাবি নীতিগতভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন ও বিশেষভাবে আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ধীর গতি দেশের সাংবাদিক সমাজকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তথ্যমন্ত্রীর (হাসানুল হক ইনু) ওপর সাংবাদিক সমাজ আর আস্থা রাখতে পারছে না। তিনি অসত্যের আশ্রয় নিয়ে ওয়েজ বোর্ড নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ’

তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য মন্ত্রণালয় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নতুন ওয়েজ বোর্ড কাঠামোতে না আনার চক্রান্ত করছেন দাবি করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, ‘যে আইন সংশোধনের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নতুন ওয়েজ বোর্ড কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা, সেই আইনের সংশোধনী প্রস্তাবটি তথ্য মন্ত্রণালয়ে ৪০ মাস ধরে পড়ে আছে।’

এ সময় ওমর ফারুক বিএফইউজে’র পক্ষ থেকে সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সাত দফা কর্মসূচি হলো- আগামী ৩১ আগস্ট সারাদেশের গণমাধ্যম সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে মত বিনিময়। ৯ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর, সমাবেশ, মাবব্বন্ধন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে দিনব্যাপী অনশন। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন সাংবাদিক সংগঠনের সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন। অক্টোবরের প্রথম সাপ্তাহে ঢাকায় সাংবাদিক- শ্রমিক- কর্মচারীর মহাসমাবেশ। এসব কর্মসূচি চলাকালে পেশাদার সাংবাদিক সংগঠনের সকল কর্মসূচিতে তথ্যমন্ত্রীকে বর্জন। তথ্যমন্ত্রী যেসব অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন, সাংবাদিক ইউনিউয়ন ও অন্য সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা অতিথি হবেন না। এই কর্মসূচি চলাকালে অঙ্গ ইউনিয়ন ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএফইউজে’র সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হয়দার চৌধুরী, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব  অমিয় ঘটক পুলকসহ প্রমুখ।

আরও পড়ুন: ৯৯৩ জন হজযাত্রীর ভিসার আবেদন জমা পড়েনি