ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্য!

মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্যকক্সবাজার সদর উপজেলার ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭১ সালে বার্মায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল বলে উল্লেখ করা হলেও মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদরা বলছেন, বার্মায় কোনও ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না। আর জেলা তথ্য কর্মকর্তার দাবি, ‘এসব জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে করা হয়। তথ্য বাতায়নের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।’

কক্সবাজার সদর উপজেলার ওয়েবসাইটের ‘মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার সদর’ পাতায় বলা হয়েছে, ‘৫ মে কক্সবাজারে প্রবেশ করে হানাদার বাহিনীর ১১৫৩টি গাড়ির বহর। অস্ত্র সংকট ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে কক্সবাজারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা বাধ্য হয়ে তখন বার্মায় আশ্রয় নেন এবং সেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি ট্রেনিং ক্যাম্পে চলতে থাকে।’ যদিও ইতিহাস বলছে, বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল না। বার্মা সরকার সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও সহায়তা করার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

বার্মায় মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও শিবির ছিল না উল্লেখ করে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে বার্মায় মুক্তিযুদ্ধে কোনও ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল না। এটি ভুল তথ্য। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তারা (বার্মা সরকার) ৫০ হাজার শরণার্থী রেখেছিলেন।কিন্তু এই শরণার্থীদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, অসাবধানতাবশত এধরনের তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করা অন্যায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসতো খুশি মতো লিখে ফেললেই হলো না। তিনি বলেন,‘চট্টগ্রামের সংগঠক হিসেবে আমি জানি, বার্মায় ১৯৭১ সালে যে বাঙালি শরণার্থী শিবির ছিল, সেগুলো ছিল একেকটি কারাগারের মতো। নিম্নমানের। এসব শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ ছিল।’

কক্সবাজার সদর উপজেলার ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভুল তথ্যমুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্টের পরিচালক সাব্বির হোসাইন মনে করেন, সরকারি সাইটে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য বিকৃতি দুঃখজনক।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাকিস্তান ও চীনের মিত্র বার্মায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক ডা. ফয়েজুর রহমান, ডা. কামাল-এ-খান, আতাউর রহমান কায়সার, অ্যাডভোকেট নূর আহমদ- এরা ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল নাফ নদী পেরিয়ে বার্মার বলিবাজারে সেদেশের সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু বার্মা সরকারের পক্ষ হতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও সহায়তা করার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এছাড়া, বার্মায় ১৯৭১ সালে যে বাঙালি শরণার্থী শিবির ছিল,সেগুলো ছিল গ্যাটো টাইপ,তথা উন্মুক্ত কারাগার। মূলতঃ বাঙালি শরণার্থীদের সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। এসব শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।’

কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়াকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন কক্সবাজারে কোনও ই্উএনও ছিলেন না। পরে যিনি এসেছেন তিনিও এখন ছুটিতে থাকায় আমি দায়িত্ব পালন করছি।’ ওয়েবসাইটের এই তথ্য সম্পর্কে তিনি অবহিত কিনা জানতে চাইলে পঙ্কজ বলেন, ‘বিষয়টি মাত্র জানলাম, এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ যদিও তার সঙ্গে কথা বলার পাঁচ ঘণ্টা পরেও ওই ওয়েবসাইট একইরকম দেখা গেছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলা তথ্য অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এটির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি মূলত ডেপুটি কমিশনারের অফিস থেকে করা হয়ে থাকে। তারাই দেখভাল করেন। এটা আমাদের করা না। ফলে এই তথ্য যে আছে বা কিভাবে আছে, সেটা নিয়ে আমরা বলতে পারবো না।’
ওয়েবসাইটে এধরনের কোনও তথ্য আছে, তা জানা নেই উল্লেখ করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আসলে এ মুহূর্তে রোহিঙ্গা ও ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে ব্যস্ত। কিছুদিন পর বিষয়টি আমি দেখবো।’ বার্মায় কোনও ট্রেনিং ক্যাম্প না থাকার পরও ওয়েবসাইটে সেটা উল্লেখ থাকার কথা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।

আরও পড়ুন: 

ফুলবাড়ী সীমান্তে ফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করলো বিএসএফ