এর আগে অভিযোগ ওঠে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্যা সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি আর্টিকেল থেকে সামিয়া রহমান ও মারজান লেখা চুরি করেছেন। ১৯৮২ সালের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র ৪ নম্বর ভলিউমের ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ফুকোর এই আর্টিকেলটি প্রকাশিত হয়েছিল। সামিয়া ও মারজানের আর্টিকেল ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্যা কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ গত বছর ডিসেম্বরে ঢাবির সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এডওয়ার্ড সাঈদের নিবন্ধ থেকে কিছু অংশ ব্যবহার করার বিষয়ে ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান শনিবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযোগ এলে তো কিছু বলার নাই। তদন্ত কমিটি তদন্ত করবে, আমাকে কমিটির মুখোমুখি হতে হবে। যা বলার সেখানেই বলবো। বিষয়টির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান জড়িত। তদন্তাধীন বিষয়ে আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ সামিয়া রহমানের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি হয়ত আমার ওপর রাগ করেছেন। তিনি তো আমার শিক্ষক।’
ঢাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য মাকসুদ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘সামিয়া রহমান ও মারজানের বিরুদ্ধে কপি-পেস্টের যে অভিযোগ এসেছে, তার কোথায় কোথায় কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে কপি করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখবো। এটা খতিয়ে দেখতে এবং সঠিকভাবে তদন্তের স্বার্থে কমিটির সদস্যদের সম্মতিক্রমে যদি মনে হয় নিবন্ধটির শুধু লেখক নয়, রিভিউয়ার ও সম্পাদককেও তলব করা প্রয়োজন, তাহলে সেটা করবো।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাওলী মাহবুব বলেন, ‘কোনও লেখক নিবন্ধ লিখতে অন্য কোনও লেখকের বক্তব্য বা তথ্য ব্যবহার করতেই পারেন। তবে অবশ্যই রেফারেন্সিংয়ের সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রেফারেন্সিংয়ের দুটি নিয়ম রয়েছে। একটি প্যারাফ্রেজিং এবং অন্যটি কোট। প্যারাফ্রেজিং পদ্ধতি হচ্ছে অপর লেখকের বক্তব্যের মূল অর্থ অপরিবর্তিত রেখে নিজের মতো করে লেখা। তবে সেই বক্তব্যের শেষে অবশ্যই সঠিক নিয়মে লেখকের নাম, সাল এবং পাতার নম্বর ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে, কোট করে লিখতে হলে ওই লেখকের বক্তব্য হুবহু লিখে লেখক ও বইয়ের নাম কোটেশন মার্কের মধ্যে আবদ্ধ করতে হয়। তবে কোট বা প্যারাফ্রেজিং, যা-ই করা হোক অন্য লেখকের বক্তব্যটুকু উল্লেখ করার পর সাইডনোটে বা ফুটনোটে অথবা বইয়ের শেষে অ্যাপেন্ডিক্সে তথ্যসূত্র (সাইটেশন) উল্লেখ করতেই হবে। অন্যথায় তা চৌর্যবৃত্তির মধ্যে পড়বে।’
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাবির সিন্ডিকেট গবেষণা ও নিবন্ধে লেখা চুরির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের মাহফুজুল হক মারজান ছাড়াও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন শিক্ষক রুহুল আমিন, নুসরাত জাহান ও বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন:
ফুকোর নিবন্ধ থেকে ৫ পৃষ্ঠা লেখা চুরির অভিযোগ, সামিয়ার অস্বীকার