সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা (সিসিটিভি) এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দুই কোটিরও বেশি নাগরিকের এই ঢাকা শহরে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে প্রতিদিন। পর্যায়ক্রমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হলেও প্রতিটি রাস্তায় ও অলিগলিতে কয়েক হাতের ব্যবধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা সম্ভব নয়।বিভিন্ন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার অনেক ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজার দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন। এই চাঞ্চল্যকর হত্যায় জড়িতদের গোয়েন্দারা শনাক্ত করেন পাশের একটি বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ দেখে। একই বছরের মে মাসে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে এক গারো তরুণীকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসের মধ্যে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। পরে যমুনা ফিউচার পার্কের নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ধর্ষক ও মাইক্রোবাস শনাক্ত করা হয়। পরে ওই ফুটেজের সূত্র ধরে ধর্ষকদের গ্রেফতার করে র্যাব।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কিকে। পরে ওই শপিং মলের নিজস্ব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে ঘাতকদের শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, ডিএমপি কন্ট্রোল রুমের আধুনিকায়নের জন্য ১৯৯৮ সালে এই প্রকল্পটি হাতে নেয় তৎকালীন সরকার। কিন্তু নানা কারণে মাঝে সেই কার্যক্রম স্থবির হয়ে ছিল। পরে ডিএমপির কন্ট্রোল রুম আধুনিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে ২০০৭ সালে রাজধানীর ৫৯টি পয়েন্টকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীনে কন্ট্রোল রুমের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ, ট্রাফিক পুলিশের জন্য মেসেজ ডিসপ্লে বোর্ড ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয় ওই বছরই।
৬১ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর ৫৯ পয়েন্টে ১৫৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, মেসেজ ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সর্বশেষ ট্রাফিক অবস্থা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
২০১৩ সাল থেকে জঙ্গিদের টার্গেট কিলিং ও হামলার ঘটনা শুরু হলে ঘাতকদের শনাক্তে সিসিটিভি ক্যামেরার গুরুত্ব বেড়ে যায়। বিশেষ করে হলি আর্টিজানসহ বিভিন্নস্থানে জঙ্গি হামলার পর সিসিটিভি ক্যামেরা ওপর জোর দেয় পুলিশ প্রশাসন। এরইমধ্যে সিসিটিভি বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি ক্যামেরার গুরুত্ব অপরিসীম। রাস্তায় কোনও মানুষজন নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্যও নেই, কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। তার মানে সেখানে আপনার অগোচরে আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। আপনার সব ধরনের কার্যক্রম সেখানে রেকর্ড হচ্ছে। সেখানে কোনও অপরাধ সংগঠিত হলে অপরাধীকে শনাক্তে সহজ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা মহানগরীকে সিসিটিভি’র নজরদারিতে নিয়ে আসা হবে। কোনও অলিগলিও বাদ থাকবে না।’
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি ফিন্যান্স এ কে এম শহীদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরো ঢাকা মহানগরীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে এরইমধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এজন্য একটি মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কাজে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।’
ছবি- নাসিরুল ইসলাম