আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বিষয়ে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রবিবার বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ উঠেছে তার সবগুলো দুর্নীতি সংক্রান্ত। এগুলো অনুসন্ধান করার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। দুদক এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করবে। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তবে মামলা হবে। মামলার পর তদন্ত হবে এবং এরপরই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতি। সব কিছুই আইন অনুযায়ী হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
এ বিষয়ে জানতে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। কমিশনের মুখপাত্র প্রণব ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি আইনমন্ত্রীর বক্তব্য শুনিনি। এ বিষয়ে তদন্ত হবে কিনা সেসব সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুদক এই দায়িত্ব নিতে পারে। আবার কিছুটা শালীনতার জন্য এই কাজটি সুপ্রিম কোর্টও করতে পারে।
তাহলে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান কোন পদ্ধতিতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রপতি অভিযোগগুলো আপিল বিভাগের বিচারপতিদের জানিয়েছেন এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এই অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এক বেঞ্চে বসতে অপারগতা জানিয়েছেন এবং তারা অভিযোগগুলো আমলে নিয়েছেন সেহেতু এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আমি মনে করি তাদের মাধ্যমে এ বিষয়ে অনুসন্ধান হওয়া উচিত। তবে চাইলে দুদকও করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যেহেতু অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বেঞ্চে বসবেন না বলেছেন এখন প্রশ্ন হলো, সুরাহা করবে কে? সংবিধান অনুযায়ী, কোনও বিচারকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উঠলে বিচারকরাই সেটির ব্যবস্থা নেবেন,সেটা তারা নিতে পারেন। ওইটাই যৌক্তিক হবে। তাদের নিজেদের খাতিরেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজটি শুরু করতে পারেন।
এদিকে, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে দুদকের আইনে কোনও বাধা আছে কিনা প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিটিং বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে দুদকের আইনে কোনও বাধা নেই। তবে তার আগে কমিশনের হাতে দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্য আসতে হবে।
উল্লেখ্য, অবকাশকালীন ছুটি শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন ৩ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ১৩ নভেম্বর শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে নিজ বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। সেখানে তিনি নিজেকে ‘সুস্থ’ বলে দাবি করলে এবং উদ্ভূত ঘটনায় ‘বিব্রত’ হয়েছেন বলায় বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনার সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্যও দেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে উদ্ধৃত করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনসহ ১১টি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে গিয়ে সেখানে এসব অভিযোগ সম্পর্কে তারা অবহিত হন এবং এ সংক্রান্ত প্রমাণ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি ২ অক্টোবর এসব অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান বিচারপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন এবং প্রয়োজনে পদত্যাগ করবেন বলে তাদের জানান এবং পরদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা বলেন। জবাবে বিচারপতিরাও তাকে (এস কে সিনহা) জানান, এসব অভিযোগের সমাধান না হলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার সঙ্গে একসঙ্গে বসে বিচারকাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে এস কে সিনহার মেয়াদ শেষ হবে।