হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব অত্যন্ত দুঃখজনক: হাইকোর্ট

হাইকোর্টএকে একে তিনটি হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে অবশেষে একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তাতেই এক প্রসূতির সন্তান প্রসবের ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ওই ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা দেখে উচ্চ আদালত এ মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রুল জারি করেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
এসময় আদালত বলেন, ‘আমরা খুবই মর্মাহত। তিনটি হাসপাতাল ঘুরে পারভীন নামের এক নারী প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা পেলেন না। মাত্র দেড় হাজার টাকার জন্য রাস্তায় তাকে সন্তান প্রসব করতে হলো। চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সেই নবজাতকেরও মৃত্যু হলো। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ একটি সভ্য দেশে এমন ঘটনাকে অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় অপরাধ বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
আদালত আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিগৃহীত। তাদের চিকিৎসায় সরকার ও সরকারের সেবা সংস্থাগুলোর অবহেলা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ফলে সরকার ও সেবা সংস্থাগুলোর সচেতন হওয়া আবশ্যক। এটি আমাদের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সভ্যতার ওপর কালিমা লেপনের সমতুল্য।’
‘তিন হাসাপাতাল ঘুরে খোলা স্থানে সন্তান প্রসব নিয়ে তোলপাড়’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত ওই নারীকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দোষীদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং প্রসূতি মাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
রুলে স্বাস্থ্য সচিব, আইজিপি, সমাজকল্যাণ সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, আজিমপুর শিশু মাতৃসদনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট, মাতৃসদনের চিকিৎসক নিলুফার, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ঘটনা তদন্ত করে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও আজিমপুর শিশু মাতৃসদনের সুপারকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ভোরে স্বামী পরিত্যক্তা অন্তঃস্বত্ত্বা পারভীন বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে সোহেল নামের এক তরুণ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দুইটি হাসপাতাল থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েও চিকিৎসা মেলেনি ওই নারীর। শেষ পর্যন্ত মাতৃসদনের সামনের রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন পারভীন বেগম। কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতকের মৃত্যু হয়।