X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব

উদিসা ইসলাম
০৬ মে ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ০৬ মে ২০২৪, ২৩:৫৯

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে গত ২২ বছরে ৩২ বার আগুন লেগেছে। প্রতিবার আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও আসে, কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। প্রশ্ন উঠেছে, এই বনে আগুন কি চাইলেই প্রতিরোধ করা যায়? পরিবেশবাদীরা বলছেন, সব আগুন প্রতিরোধ হয়তো সম্ভব না, কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করলে ভয়াবহতা কমানো সম্ভব। বনকে রক্ষা করতে হবে বনের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে। যদিও প্রতিরোধ চেষ্টায় পুরোপুরি ব্যর্থ বন বিভাগ। বন কর্তৃপক্ষ বলছে, সব চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে। তবে প্রকৃতির কাছে তারা অনেক সময় অসহায়।

কেন পূর্ব বনে এত আগুন

সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগে ৩২ বার আগুনের কথা শুনে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে—কেন কেবল পূর্ব বিভাগে আগুন লাগে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন ছিল বর্তমানের দ্বিগুণ। কমতে কমতে বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার—যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির সর্বমোট ৫১ ভাগ। এর মধ্যে পূর্ব বিভাগের নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বনস্তর অনেক উঁচুতে উঠে গেছে নদী থেকে। এখানে এক বুক পর্যন্ত শুকনো পাতা, গাছের ডালে ভর্তি। দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ রূপ ধারণের সব অনুষঙ্গ রয়েছে।  খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘ওই জায়গাজুড়ে বসতিও বেশি, আনাগোনা বেশি।’ বনরক্ষীরা কোথায় ছিলেন, তারা বনকে কীভাবে রক্ষা করবেন, যখন কিনা আগুনের খবরই তারা জানেন দেরিতে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগুন যেখানে লাগে তার আশপাশের মানুষ খোঁজ পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানায়। শহর গ্রাম বন পাহাড় সব জায়গায় একই নিয়ম। বন সংরক্ষণের সব স্তরের মোট ৮০০-এর কিছু বেশি কর্মী দিয়ে কীভাবে এত বড় জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।’

কতভাবে লাগে সুন্দরবনে আগুন

পাশের দেশ ভারতে বনে আগুনের যে কয়টি খবর পাওয়া যায়, তারমধ্যে ২০১৭ সালে বান্দিপুর বনের আগুনে এক হাজার হেক্টরেরও বেশি বন ধ্বংস হয়ে যায়। ২০১৬ সালে উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বন ছাই হয়ে গিয়েছিল এবং সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। ভারতের হিমালয় অঞ্চল, অন্ধ্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং ওড়িশার শুকনো বন এই দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুন্দরবনের আগুন নেভানোর কাজে দায়িত্বরত কর্মীরা বনের আগুনের কারণ চিহ্নিত করার গবেষণা বলছে, বনের আগুন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট হতে পারে। প্রাকৃতিক বনের আগুনের সবচেয়ে বড় কারণ হলো—বজ্রপাত থেকে শুকনো গাছপালায় আগুন লেগে। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এই অগ্নিকাণ্ডগুলো বেশিরভাগই মানুষের উপস্থিতি থেকে দূরবর্তী স্থানে ঘটে। গাফিলতির কারণে যে অগ্নিসংযোগ ঘটে, তার প্রকৃত শাস্তি হলে আগুনের সংখ্যা কমবে। বনের মধ্যে ক্যাম্প ফায়ার, রান্না, উষ্ণতা, আগুন বন্ধ করতে হবে, সিগারেট, সিগার, পাইপ এবং তামাক, আলো জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত ম্যাচ বা লাইটার ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে ও সতর্ক থাকতে হবে।

কজ অ্যান্ড ইফেক্ট অব ওয়াইল্ডফায়ার প্রবন্ধে আগুনের অন্যান্য সাধারণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—বনের মধ্যে নিয়ম না জেনে অযথা আগুনের ব্যবহার, ধ্বংসাবশেষ পোড়ানো, যানবাহন, আতশবাজি, পাওয়ার লাইন, গুলি (গোলাবারুদ, বিস্ফোরণ), স্বতঃস্ফূর্ত দহন (ভিজে থাকা অবস্থায় খড়ের গাদা, কম্পোস্টের স্তূপ ও তৈলাক্ত ন্যাকড়া)।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘বারবার আগুন লাগার পেছনে প্রশাসনের গাফিলতি অন্যতম কারণ। আর আগুন লেগে যাওয়ার পরে গুরুত্ব দিয়ে সেটি নিবারণ করতে অবহেলাও ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বনরক্ষীরা কোথায় থাকেন, তারা আগুন না নিভিয়ে সারা রাত জ্বলতে দিলেন কেন।’ বনরক্ষীরা আগুন দেখতে পেলো না, গ্রামবাসীকে কেন আগে ব্যবস্থা নিতে হলো প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘মানুষ তো ছুটে গেছে, কারণ এই বন তাদের আশ্রয়, তাদের সংস্কৃতি।’ এ ধরনের দুর্ঘটনা চাইলে প্রতিরোধ সম্ভব উল্লেখ করে গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘আমরা সাধারণত এই সময়ে বনে যাই না। এখন বনের চেহারা অন্যরকম। চারদিকে ফুল থাকে, নতুন পাতা গজাচ্ছে, কেওড়া খলিসা ফুলের সুবাস। এই সময়টায় লোকজন মধু সংগ্রহে যায়—মার্চ থেকে জুন। যেহেতু সাধারণ মানুষের পদচারণা বাড়ে, সেক্ষেত্রে এসময় নজরদারি দরকার। বন মনিটরিং ও চেক করে আগুনের কোনও উৎস যেন না থাকে, সেটা নিয়মিত দেখা দরকার।’

এবারের আগুন সারা রাত কেন জ্বলতে দেওয়া হলো

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী নুরুল করিম বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে পানির উৎস পেতে কষ্ট হয়েছে। এখানে কোনও সুযোগ নেই। অনেক দূরে ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দেখে—প্রথম দিন আর কাজ করতে পারিনি।’ গওহার নঈম ওয়ারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধরনের বিপর্যয়ে এটা কোনও যৌক্তিক কথা হতে পারে? আগুন কি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে?’ যদিও মিহির কুমার দো বলেন, ‘রাতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়নি, এটা ঠিক না। স্থানীয় এলাকাবাসী এবং বনরক্ষীদের চেষ্টা রাতেও অব্যাহত ছিল। তবে বাহিনীর (নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ড) বিষয়টা তারা বলতে পারবেন। বনের লোক চেষ্টা করে গেছেন।’

আগুনের কারণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল কবির বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে গিয়ে বনজীবীরা বিড়ি-সিগারেটের আগুন নেভায় না, আবহাওয়া তপ্ত, সব মিলিয়ে অনেক সময় আগুন লাগে। প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি, এ জন্য আমরা বনজীবী ও স্থানীয়দের সচেতন করেছি। সচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। আগুন প্রতিরোধ সম্ভব।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কাওরানবাজারে লা ভিঞ্চি হোটেলের জেনারেটর রুমে আগুন
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
সর্বশেষ খবর
ভারত ও চীনকে যুক্ত করা গেলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সম্ভব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত ও চীনকে যুক্ত করা গেলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সম্ভব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি, রাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা 
ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি, রাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা 
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
ওজন মাপার আগে এই বিষয়গুলো জেনে নিন
ওজন মাপার আগে এই বিষয়গুলো জেনে নিন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক