বোনের হাত ধরে ঘরে ফেরা হলো না শিশু হৃদয়ের

 

শিশু হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের পরসেদিন বাড়ির সামনে খালের পাড়ে খেলায় মগ্ন ছিল দুই ভাইবোন—শিশু সাথী (৫) ও হৃদয় (৩)। খেলার মাঝখানে পানি খেতে চায় হৃদয়। ছোট ভাইকে পানি খাওয়াতে খাল পার হয়ে ঘরে ফিরতে চেয়েছিল সাথী। খাল পার হতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। এ সময় পা পিছলে খালে পড়ে যায় হৃদয়। ধরে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সাথী। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার কাছে অংশ নেন।  

উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর (রবিবার) বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে রাজধানীর মুগদার মদিনাবাগের খালের পানিতে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায় হৃদয়। এ ঘটনার ৬দিন পর শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিতে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

হৃদয় নিখোঁজের সময় বাড়িতেই ছিলেন তার বাবা কামাল উদ্দিন। পেশায় তিনি রিকশাচালক। মেয়ের চিৎকার শুনে প্রায় ৬ ফুট গভীর খালে ঝাঁপিয়ে পড়েন কামাল উদ্দিন। তার সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।

শিশুটির মা রোজিনা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। টানাটানির সংসারে তাদের ছিল তিন সন্তান। এর মধ্যে মেজ সন্তান হৃদয়। বড় মেয়ে সাথী ও ছোট মেয়ে তামান্না।

মুগদা মান্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হৃদয় নিখোঁজ হওয়ার প্রথম দিন থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা কাজ করছেন। গত ১৯ অক্টোবর তারা উদ্ধারকাজ আপাতত স্থগিত রাখেন। তখন তাদের অনুমতি নিয়ে আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। শুক্রবার রাতে খোঁজার জন্য ভেকু (এস্কেলেটর) নিয়ে আসি। আজ দুপুরে কাজ শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসে এস্কেলেটর বা ভেকু ব্যবহারের চর্চা নেই। স্থানীয় নেতাকর্মীরা শুক্রবার রাতে ভেকু নিয়ে এসে শনিবার দুপুরে কাজ শুরু করেন। এরপরই হৃদয়ের লাশ পেয়েছি।’

এদিকে নিখোঁজের পরপর হৃদয়কে উদ্ধারে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন কোনও ধরনের সহায়তা না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিশুটির স্বজন ও প্রতিবেশীরা। রোজিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে ওরা (ওয়াসা, সিটি করপোরেশন) আসেনি। আমি এর বিচার চাই।’

শিশু হৃদয় নিখোঁজের ঘটনায় শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রোজিনা বাদী হয়ে মান্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমাসসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মুগদা থানায় ফৌজধারি কার্যবিধির ৩০৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বাড়ির মালিক সফিউল আলম তনয়, তার মা নূরে জান্নাত, কেয়ারটেকার পারভীন আক্তার, ওয়াসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন।

মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘রোজিনা বেগমের মামলার ভিত্তিতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

 আরও পড়ুন: মুগদায় খালে পড়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ উদ্ধার