‘অবৈধভাবে সোনা আনতে সহযোগিতা করেন কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী’

আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাইআপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে জিজ্ঞাসাবাদে সোনা চোরাচালানের কয়েকটি চক্রের নাম পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানি লন্ডারিং ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বৈধ কাগজপত্রহীন সোনা সংগ্রহে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন আপন জুয়েলার্সের মালিকরা।

রবিবার (০৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই দিলদার আহমেদ সেলিম, গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

আপন জুয়েলার্সএই তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজধানীর চার থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের। এই পাঁচ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। তাদের শোরুমে যে সোনা রয়েছে তার কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব সোনা কিভাবে তারা সংগ্রহ করেছেন, কারা তাদের সহায়তা করেছেন– এসব জানতে চেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা তাদের কাছ থেকে কয়েকটি নাম পেয়েছি, যারা ব্যবসায়ী। এরাই তাদের সহায়তা করেছে। যাদের নাম পেয়েছি, তারা সবাই বড় ব্যবসায়ী। সোনা ব্যবসা ছাড়াও তারা অন্য ব্যবসা করেন। আমরা নামগুলো যাচাই বাছাই করে দেখব।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এরা কয়েকটি চক্র হয়ে কাজ করে। আমরা এই চক্রের বিষয়ে আরও ‍অনুসন্ধান করব। তাছাড়া, আপন জুয়েলার্সের মুদ্রাপাচারের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাদের আয়কর বিবরণীতেও গরমিল রয়েছে। এসব বিষয়ে তারা আগে যে ডকুমেন্টস দিয়েছিল সেগুলো তাদের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।’

আপন জুয়েলার্সের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি যারা অধিদফতরে অন্যান্য কাজে আসেন সেসব দর্শনার্থীদেরও ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একটি মেডিক্যাল টিমও ছিল অধিদফতরে।

গত ১২ আগস্ট শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর মুদ্রাপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দিলদার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে গুলশান, ধানমন্ডি, রমনা ও উত্তরা থানায় পাঁচটি মামলা করে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সোনার অলঙ্কার এনে এর অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সঠিক তথ্যও তারা আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করেনি। এসব বিষয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বলেন, ‘রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের অনুমতিক্রমে আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা। রাত পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাতে তাদের থানা হাজতে রাখা হবে। সোমবার সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হবে।’

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে এনে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা কারাগারে রয়েছে আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার সহযোগীরা।

সাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে আপন জুয়েলার্সের অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে তদন্তে নামেন শুল্ক গোয়েন্দারা। ছেলে কারাগারে যাওয়ার ছয় মাস পর ২৪ অক্টোবর দিলদার ও তার দুই ভাইকে মুদ্রাপাচার মামলায় কারাগারে পাঠান আদালত।