তামাকের অবৈধ বাণিজ্যে সরকার বছরে হারাচ্ছে ২৪৫ কোটি টাকা

মতবিনিময় সভায় তামাকের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়দেশে তামাকের অবৈধ বাণিজ্যের কারণে প্রতিবছর দুইশ ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকজাত দ্রব্যের এই অবৈধ বাণিজ্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
রবিবার (৫ নভেম্বর) ‘এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের অবৈধ বাণিজ্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সম্মেলন কক্ষে যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে অ্যালায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ)।
মতবিনিময় সভায় বলা হয়, অবৈধ এ বাণিজ্যের জন্য এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল) প্রটোকল স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেওয়াসহ সিগারেটের চোরাচালান বন্ধে নৌবন্দর, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বক্তারা বলেন, তামাকের অবৈধ চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে, তামাক কোম্পানির গেটে ব্যান্ডরোল মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, নকল সিগারেট উৎপাদনকারী অবৈধ কারাখানাগুলোকে চিহ্নিত করে সব ধরনের মেশিনারিজ ধ্বংস করতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে দেশে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে শতাধিক ব্র্যান্ডের অবৈধ তামাকপণ্য বাজারজাত হচ্ছে। অবৈধ সিগারেট ও চুরুটের অধিকাংশই সমুদ্র ও বিমানপথে আসে। আর ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের প্রায় পুরোটাই আসে স্থলপথে। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত তামাকজাত দ্রব্যের একটা বড় অংশ কর ফাঁকি দিয়ে বাজারজাত করা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের বরাত দিয়ে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, গত বছর ও চলতি বছরের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার মূল্যমানের অবৈধ সিগারেট আটক করা হয়েছে। তবে এটা দেশে আসা চোরাই ও অবৈধ সিগারেটের ১০ শতাংশও নয়। সারাদেশে চোরাই সিগারেট অথবা অবৈধ সিগারেট জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে কিশোর ও তরুণরা। কারণ অবৈধ সিগারেটে কোনও কর দিতে হয় না বলে এগুলো বাজারে সস্তায় পাওয়া যায়।
সভায় এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো— অবিলম্বে এফসিটিসি প্রটোকলে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করা, প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, দ্রুত তামাকজাত দ্রব্যের জন্য করনীতি প্রণয়ন, চোরাচালন নিয়ন্ত্রণে প্রটোকল অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃদেশীয় সমাঝোতা চুক্তি করা, নকল সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানি বা ব্যক্তিকে কাঠোর শাস্তি দেওয়া।
বক্তারা বলেন, মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রায় শতভাগই তামাকসেবী। শুধু তাই নয়, ৬০ শতাংশ ক্যান্সারের জন্য দায়ী এই তামাক।
বিএইচআরএফ সভাপতি দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক মারুফের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন, সাউথ এশিয়ান রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. ইউএস রোকেয়া আকতার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবিক-এর কারিগরিক পরামর্শক রফিকুল ইসলাম মিলন। সভা সঞ্চালনা করেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা।