‘লিট ফেস্ট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক উৎসবের আবহ তৈরি হয়’

লিট ফেস্টে অংশ নিচ্ছেন শাহীন আখতারবর্তমান সময়ে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় লেখিকা শাহীন আখতার। ‘তালাশ’ উপন্যাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের শিকার নারীদের জীবন সংগ্রাম ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ব্যপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। ‘সখী রঙ্গমালা’, ‘ময়ূর সিংহাসন’ তার পাঠকনন্দিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। সপ্তম ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৭-তে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে কথা হয় এই ঔপন্যাসিকের সঙ্গে।
আপনি এ বছর ঢাকা লিট ফেস্টে অংশ নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
শাহীন আখতার: আমি এ নিয়ে পঞ্চমবার ঢাকা সাহিত্য উৎসবে অংশ নিচ্ছি। এর আগের উৎসবগুলোতে আমি নিজের লেখা থেকে পাঠ ও অনুবাদ নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছি। এবারের উৎসবে আমার আলোচনার বিষয় ‘সম্পর্কের এপার ওপার’, যেখানে দুই বাংলার বিভক্ত হওয়াসহ বর্তমানে পারস্পরিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিনিময় এবং অন্যান্য সম্পর্ক নিয়ে আলাপ হবে। আমার প্রকাশিতব্য উপন্যাসের জন্য গত কয়েক বছর ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি, বিষয়টি বেশ জটিল এবং স্বল্প সময়ে আলোচনা করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং।
আপনার নতুন উপন্যাস সম্পর্কে পাঠকদের কিছু বলবেন কি?
শাহীন আখতার: ২০১৮ সালের একুশে বই মেলায় আমার নতুন উপন্যাস আসছে। চল্লিশের দশককে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে এই উপন্যাসের সময়কাল। এ শুধু বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের দশকই নয়, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হানাহানি আর পরিশেষে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে ভারতবাসী তথা বাঙালি হিসেবে ভাগে হয়ে যাওয়ারও দশক। তাতে রক্ত ঝরেছে, রাতারাতি বাস্তুচ্যুত হয়েছে অনেক মানুষ। দেশভাগের ৭০ বছর পরও দেখা যায়, দোষারোপের বেলায় তৎকালীন নেতাদের গা বাঁচানো প্রচারই বলবৎ আছে। সে জায়গাটা বোধহয় সৎভাবে মোকাবিলা করার সময় এসে গেছে। তাতে লাভ-ক্ষতির খতিয়ান আসতে পারে, আসতে পারে দেশ বিভাগের সুদূরপ্রসারী ফলাফল।
আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বাংলা একাডেমিতে ঢাকা লিট ফেস্টের পরিবেশ সম্পর্কে কিছু বলুন।
শাহীন আখতার: ঢাকা সাহিত্য উৎসবে সাহিত্যকদের আলোচনার সঙ্গে বইয়ের দোকান, খাবারের দোকান, প্রাণবন্ত আড্ডা— সব মিলিয়ে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে এক আন্তর্জাতিক উৎসবের আবহ তৈরি হয়। বিদেশি লেখকদের কাছ থেকে কিছু শোনা আমার কাছে সবসময়ই অনুপ্রেরণাদায়ক। সাহিত্য পত্রিকাগুলো এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের পর্যালোচনা ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। সবকিছু মিলে খুবই রোমাঞ্চকর একটি সময়। তাছাড়া, দু’টি ভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা সাব-টাইটেলের মাধ্যমে তাদের কাজ একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে পারেন। কিন্তু অনুবাদ না হলে ভিন্ন দেশের লেখকরা তাদের কাজ অন্যদের সঙ্গে বিনিময় করতে পারেন না। সাহিত্য উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় বই অনুবাদের সুযোগ তৈরি হয়।
তাহলে কি বাংলা গল্প কবিতা অনূদিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
শাহীন আখতার: হ্যাঁ, অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সাহিত্য সঠিকভাবে বিনিময়ের একটি পূর্বশর্ত হলো— তা অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হওয়া। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) এই কাজটি দীর্ঘদিন করেছে। ডেইলি স্টারের বই বিভাগও এ বিষয়ে বেশ ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টার ও বেঙ্গল লাইটস বুক বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের অনুবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলা সাহিত্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথার্থ স্থান পাবে।