X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পর্দা নামলো ঢাকা লিট ফেস্টের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৩২আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:২৮

সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঢাকা লিট ফেস্টের তিন দিনের আয়োজনের পর্দা নামলো শনিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায়। এদিন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিদায়ের সুর বাজলেও আনন্দের কমতি ছিল না। নানা পর্বে নানা বিষয়ে আলোচনায় শেষ হলো তিনদিনের এই মিলনমেলা। সকালে বাউল গানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শেষদিনের অনুষ্ঠান। এরপর একে একে ছয় মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা।

সকাল ১০টায় আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মঞ্চে শুরু হয় প্রথম আয়োজন। উইমেন আর্ট অ্যান্ড পলিটিক্স শীর্ষক আলোচনায় বি রোলেটের সঞ্চালনায় অংশ নেন এস্থার ফ্রয়েড, নন্দনা সেন, বিগো চৌল ও সাদাফ সায্‌। নারীদের আলোচনায় উঠে আসে নারীদের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং তার প্রতিকারে করণীয়। বক্তাদের আলোচনায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির কথাও উঠে আসে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের রাজনীতিও উঠে আসে।

আনুক আরুদপ্রাগাসমের হাতে ডিএসসি পুরস্কার তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্রিটিশ লেখক জন বার্জারকে সম্মাননা জানালেন তারই বন্ধু অস্কারজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন। গত জানুয়ারি মাসে মারা যান জন বার্জার। লেখক বন্ধুকে অনন্য, অসাধারণ বলেই দাবি করেন টিলডা। আলোচনার পর টিলডাসহ চার পরিচালকের নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। এটির নাম ‘দ্য সিজন্স ইন কুইন্সি; ফোর পোর্ট্রেইটস অব জন বার্জার’। এই ডকুমেন্টারিতে টিলডা অভিনয়ও করেছেন।

‘কলমকে কেন এত ভয়’ নামক সেশনে অংশ নেন লেখক আহমেদ মোস্তফা কামাল, সাংবাদিক ও লেখক মাহবুব আজিজ।

উইলিয়াম ডালরিম্পল রচিত ‘কোহিনূর: দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট ইনফেমাস ডায়মন্ড’ বইয়ের গল্প নিয়ে ‘স্টোরি অব কোহিনূর’ সেশনটি শুরু হয়। সেশনটি সঞ্চালনা করেন সাদাফ সায্‌। ডালরিম্পল বলেন, যদিও কোহিনূরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি কিন্তু আকৃতির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ শতাধিক হীরার মধ্যেও এটির অবস্থান নেই। কিন্তু বরাবরই এটি আলোচিত একটি হীরা।

সকালে ভাস্কর নভেরা হলে চলছিল ‘ডিসপ্লেসমেন্ট’ শীর্ষক আলোচনা। এতে অংশ নেন লেখক জেস বল, ডেভিড জেলে এবং সঞ্চালনা করেন কথা সাহিত্যিক সর্বরী আহমেদ। বক্তাদের আলোচনায় উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কথা ফুটে ওঠে। তারা বলেন, সব ছাপিয়ে উদ্বাস্তুদের মূল পরিচয় তারা মানুষ।

‘কমিউনিজম অ্যান্ড জায়ানিজম: আনএক্সপেক্টেড ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন চার্লস গ্লাস, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, ডমিনিক জিগলার, রিচার্ড লয়েড পেরি। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন বি রোলেট। আলোচনায় ইহুদিবাদ ও বামপন্থা নিয়ে নানা মত উঠে আসে। ইহুদিবাদ নিয়ে বেলফোর ঘোষণা সবচেয়ে মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেন চার্লস গ্লাস। অন্যদিকে কাজী নাবিল আহমেদ ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের আবাসস্থল ঘোষণাটিকে কলোনিয়াল ইমপ্ল্যান্ট বলে আখ্যা দেন। এটিকে পুঁজিবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া একটি পরিকল্পনা বলেই জানান তিনি। কমিউনিজম নিয়ে বক্তাদের আলোচনায় একটি কথাই উঠে আসে, রুশ বিপ্লবের সেই কমিউনিজম এখন আর নেই। অনেক ধারা বদলেছে। সেক্ষেত্রে চীন বড় উদাহরণ।

‘১৯৭৪ দ্য সাইলেন্ট ইয়ার’ শীর্ষক আলোচনায় উঠে আসে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথা। এতে গর্গ চ্যাটার্জির সঞ্চালনায় অংশ নেন নাওমী হোসেন ও সৈয়দ বদরুল আহসান। বাংলাদেশের ইতিহাসে যত দুঃসময় ছিল তার মধ্যে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ একটি বড় ঘটনা।

কবি শামসুর রাহমান অডিটোরিয়ামে ‘ব্লোন টু ইটস বিডস’ শীর্ষক একটি আলোচনায় অংশ নেন আনুক আরুদপ্রাগাসম, ক্যাথরিন ল্যাসি ও করণ মহাজন। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন এলিনর শ্যান্ডলার। এই তরুণ সাহিত্যিকরা সাহিত্য সৃজনে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এদের মধ্যে আনুক ও করণ ডিএসসি প্রাইজের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন।

‘সিজলেজ চ্যাটার অব ড্যামন’ শীর্ষক আলোচনায় বাংলাদেশের তরুণ লেখক ইখতিসাদ আহমেদের সঙ্গে বসেছিলেন শ্রীলংকার বর্ষীয়ান সাহিত্যিক অশোক ফেরি। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সাহিত্যচর্চার বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। দুপুরে কবি শামসুর রাহমান হলে চলছিল ভাষার রাজনীতি ও ভাষার অর্থনীতি শীর্ষক আলোচনা। এই আলোচনায় অংশ নেন কিন্নর রায়, সেবন্তি ঘোষ ও আলতাফ শাহনেওয়াজ। সঞ্চালনায় ছিলেন হামিম কামরুল হক। বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে ভাষার নানা প্রেক্ষাপট। তারা দাবি করেন, শাসক ও শোষকের আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই ভাষার প্রকৃত মুক্তি ঘটবে।

দুপুরের পর পর লনে ‘সিরিয়া ওয়ার উইদাউট এন্ড’ শীর্ষক আলোচনায় বিবিসির সাংবাদিক জাস্টিন রোলেট, সাংবাদিক চার্লস গ্লাস এবং অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম অংশ নেন। তারা সিরিয়ার যুদ্ধবিষয়ক সংকটের ইতিহাস, পটভূমি এবং ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, অচিরেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

মধ্যদুপুরে আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে খাদেমুল ইসলামের সঞ্চালনায় বসেন ব্রিটিশ নাট্যকার ডেভিড হেয়ার। ‘দ্য ব্লু টর্চ পেপার’ শীর্ষক আলোচনায় ডেভিড হেয়ারের জীবনী উঠে আসে। এটি ডেভিড হেয়ারের আত্মজীবনী। তার দীর্ঘ নাট্যযাত্রা নিয়েই কথা হয়। ১৯৬০ সালে কিভাবে সেই ব্রিটেনে নাটক নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই গল্পগুলোই দ্বিতীয়বারের মতো বলেন ডেভিড হেয়ার।

মধ্যদুপুরে ‘ধর্ষণ পুরুষের ক্ষমতা, পৌরুষের অক্ষমতা’ শীর্ষক একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন আনোয়ারা সৈয়দ হক, সাদেকা হালিম, রিতা দাস রয় এবং বীণা বিশ্বাস। বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, পুরুষরা ধর্ষণকে নিজের জন্মগত অধিকার বলেই মনে করে। তারা দাবি করেন, নারীর প্রতি সহিংসতার সর্বোচ্চ নৃশংসতা হচ্ছে ধর্ষণ এবং এটি স্বাভাবিক। এর জন্য দায়ী আমাদের সামাজিক অবকাঠামো। আলোচনায় বক্তারা বলেন, পারিবারিক অনুশাসনই পারে ধর্ষণ রুখতে।

দিন শেষ সমাপনীর ঠিক আগেই আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ হলে ছিল ব্রিটিশ সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘গ্রান্টা’র মোড়ক উন্মোচন। এতে ছিলেন গ্রান্টা’র অনলাইন এডিটর।

এদিকে, শেষ বিকালে লন ছিল লোকে লোকারণ্য। কারণ সেসময় মঞ্চে ছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। কবি এই উৎসবের আয়োজকদের অভিনন্দিত করেন এবং স্বরচিত সাতটি কবিতা পাঠ করেন। এরপরপরই নাইজেরিয়ান সাহিত্যিক বেন ওকরি ও টিল্ডা সুইন্টন নিজেদের লেখা থেকে পাঠ করেন একই মঞ্চে।

দিন শেষে সবারই অপেক্ষা ছিল সমাপনী আয়োজন নিয়ে। সমাপনী আয়োজনে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনিই ঘোষণা করেন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক সাহিত্য পুরস্কার ডিএসসি প্রাইজ। এবার পুরস্কারটি পান শ্রীলংকার সাহিত্যিক আনুক আরুদপ্রাগাসম। তিনি তার দ্য ‘স্টোরি অফ অ্যা ব্রিফ ম্যারেজ’ উপন্যাসটির জন্য এ পুরস্কার পান। এ সময় মঞ্চে ছিলেন ডিএসসি সাহিত্য পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সারিনা নারুলা ও অন্য বিচারকরা।

পুরস্কারের সম্পূর্ণ অর্থ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠানকে দান করে দিচ্ছেন শ্রীলংকার এই তরুণ সাহিত্যিক।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, এ বছরের লিট ফেস্ট সবচেয়ে সেরা আয়োজন বলেই মনে করছেন তিনি। এমন উৎসবই তারা প্রত্যাশা করেন। মান এবং গুণগত বিচারে এটি দেশি-বিদেশি সবারই হৃদয় কেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে ‘হে ফেস্টিভ্যাল’ এ বহুবার দাওয়াত পেলেও তিনি সেটিকে নিজের বলে ভাবতে পারেননি– তাই যাওয়া হয়নি। ঢাকা লিট ফেস্ট ঢাকার নিজস্ব অনুষ্ঠান তাই তিনি এখানে বার বার আসেন। এটি তার মন কেড়ে নিয়েছে।

এরপর একে একে লিট ফেস্টের তিন পরিচালক সাদাফ সায্‌ ও কাজী আনিস আহমেদ  মঞ্চে উঠে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সবশেষে আহসান আকবর সবাইকে চমকে দিয়ে ‘ওকচা’ নামক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ঘোষণা দেন। সমাপনী আয়োজনে এটিই ছিল দর্শকদের জন্য উপহার। এর আগে কান উৎসবে নেটফ্লিক্সের এই ছবিটি প্রদর্শিত হয়।

শিশুদের জন্যও ছিল চার থেকে পাঁচটি সেশন। অংক শেখা, গল্প বলা, নন্দনা সেনের গল্প বলাসহ আরও কয়েকটি আয়োজন।  

/এএম/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ঢাকা লিট ফেস্টের
ডিএসসি দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শ্রীলঙ্কার আনুক আরুদপ্রাগাসাম
সংস্কৃতিতে নিউ মিডিয়া ও গণমাধ্যমের ভূমিকা সবসময় ইতিবাচক নয়
সর্বশেষ খবর
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
বেসিস নির্বাচন২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা