‘তোর বস কই, যে যেখানে আছিস সেখানেই থাক, ড্রয়ার খোল’, এই কথা বলেই চার মুখোশধারী গুলি করতে থাকে বনানীর জনশক্তি রফতানি প্রতিষ্ঠান এমএস মুন্সি ওভারসিসের ভেতরে। এরপর তারা ড্রয়ার থেকে টাকা নিয়ে বাইরে থেকে গেট আটকে দিয়ে চলে যায় বলে জানিয়েছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দেওয়া মুন্সি ওভারসিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে হামলার নৃসংশতা। এই রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস সহকারী মো. জাফর। ঘটনার সময় তিনি অফিসের ভেতরেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘জনশক্তি রফতানির অফিসে সারাদিনই মানুষ আসা-যাওয়া করে। বাড়িটির প্রথম ফটকে এবং অফিসের গেটে দু’জন নিরাপত্তাকর্মী থাকে। অনেক মানুষ অফিসে আসে যায়, তাই তেমন বাধা দেওয়া হয় না। অফিসে প্রবেশের মুখে সিসি ক্যামেরাও আছে।’
ঘটনার সময় অফিসের ভেতরে মালিকসহ দশজন ছিলেন উল্লেখ করে সেলস ম্যানেজার টিটু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের অফিসে স্টাফ মোট ১১ জন। তবে গতকাল দশজন উপস্থিত ছিল। আমাদের অফিস সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮পর্যন্ত খোলা থাকে। ওরা ঢোকার সময় শুধু আমাদের পিয়ন আলীর কাছে জানতে চেয়েছিল, তোদের বস কই? এরপর ভেতরে ঢুকে তারা বলল, যে যেখানে আছো, সেখানেই থাক। টেবিলের ড্রয়ার খোল, এই কথা বলেই ভেতরে ঢুকে বসের রুমের গেল। বস তাদের জিজ্ঞেস করলো, এই কি? এরপরই গুলি, বিকট শব্দ হলো। বস বলল ওরে মা।’
তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা সবাই মুখোশ পড়া ছিল। এদের মধ্যে একজন ছেলে বাইরে থেকেই মুখোশ পড়ে আসে। বাকিরা ভেতরে বসে মুখোশ পড়ে বলে আমার ধারণা।’
সিদ্দিকের সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল কিনা, এর জবাবে টিটু বলেন, ‘আমাদের বসের সঙ্গে কারও কোনও ব্যবসায়িক ঝামেলা নেই। তবে ঘটনার পর শুনছি, বসের এলাকা টাঙ্গাইলের এক এজেন্টের সঙ্গে নাকি ঝামেলা চলছিল। এছাড়া আর কোনও দ্বন্দ্ব বা ঝামেলার কথা আমি জানি না।’
গালিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল ঘটনার সময় আমরা অফিসে ছিলাম না। আমরা আগেই চলে যাই। এই বাড়িতে মুন্সি সিদ্দিক হোসেন প্রায় তিনবছর ধরে ভাড়া থাকেন। তিনি ভদ্র মানুষ, তার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব ছিল কিনা আমরা জানা নেই।’
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ভবনের তৃতীয় তলায় নোমান অ্যাসোসিয়েট, এস্মার্ট ফেয়ার, কাদের অ্যাসোসিয়েট ও মানিকগঞ্জ ট্রাভেলসহ মোট চারটি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে। দ্বিতীয় তলায় বাড়ির মালিকের মুসা ইন্টারন্যাশনাল। নিচতলার বামপাশে মুসা ইন্টারন্যাশনাল এবং ডানপাশের এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সি। বাড়িটিতে দু’টি গেট দিয়ে প্রবেশ করা যায়। এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সিতে প্রবেশের জন্য ডানপাশের গেট ব্যবহার করতে হয়। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে দ্বিতীয় আরেকটি গেট দিয়ে মুন্সি ওভারসিসে প্রবেশ করতে হয়। দু’টি গেটেই একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ঘটনার পর অফিসটি পুলিশ সিলগালা করে দিয়েছে।
এদিকে, বুধবার বিকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, গুলিতেই নিহত হয়েছেন সিদ্দিক হোসেন।
ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে স্বজনরা নিহতের লাশ নিয়ে গেছেন। নিহত মুন্সি সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি গ্রামে। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় মেয়ের স্বামী এই অফিসেই প্রধান হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তবে ঘটনার সময় তিনি অফিসে ছিলেন না।
হত্যাকাণ্ডের প্রধান কোনও কারণ জানাতে না পারলেও পুলিশ সিদ্দিক হোসেন মুন্সি হত্যায় তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করছে বলে জানিয়ে ডিএমপির গুলশানের উপ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক, ব্যবসায়িক বা স্থানীয় কোনও ঝামেলায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ ঘটনাস্থল ও আশপাশে থাকা সিসি ফুটেজ দেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান ডিসি মোস্তাক।
এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ভিডিও দেখুন এখানে: