চেহারা পাল্টে চলাফেরা করছে জিয়া!

চেহারা পাল্টে চলাফেরা করছে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াউল হক

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে চেহারা পাল্টিয়ে ফেলেছে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গত বছরের আগস্টে ২০ লাখ টাকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকেই পলাতক রয়েছে জিয়া। একসময় তার মুখভর্তি দাঁড়ি থাকলেও এখন চেহারা এবং বেশভূষা পাল্টে চলাফেরা করছে। আত্মগোপনে থেকেই আনসার আল  ইসলামের নেতৃত্ব দিচ্ছে সে।

উল্লেখ্য, এ বছরই আনসার আল ইসলাম নামের এই জঙ্গি সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৬ নভেম্বর অভিজিৎ হত্যা ঘটনায় জড়িত আনসার আল ইসলাম সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা ও সামরিক কমান্ডার মেজর জিয়ার বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।

সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসি’র একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, সোহেল তুরাগের বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় থাকতো। গত জুলাই মাসে জিয়া তার বাসায় গিয়ে তিন দিন অবস্থান করেছিল। এরপর থেকে জিয়ার সঙ্গে সিক্রেট অ্যাপসে যোগাযোগ হলেও আর দেখা হয়নি বলে জানিয়েছে সোহেল।

আবু সিদ্দিক সোহেল জানিয়েছে, মেজর জিয়ার আগের মতো মুখভর্তি দাঁড়ি নেই। কখনও ক্লিন সেভ আবার কখনও ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি রাখে। বাইরে চলাচলের সময় মুখে ধুলাবালি এড়ানোর অজুহাতে মাস্ক পড়ে থাকে। স্বাস্থ্যও আগের চেয়ে কমে গেছে অনেক। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত জিয়ার ছবি দেখে তাকে চেনার কোনও উপায় নেই বলে মন্তব্য করে সোহেল।

জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া সোহেলের ভাষ্য, তাদের শীর্ষ নেতা মেজর জিয়া চলাফেরায় অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করে। সংগঠনের অল্প-কয়েকজনের সঙ্গেই তার সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। তারপরও সে (মেজর জিয়া) সবকিছু যাচাই করে কোনও আস্তানায় যাতায়াত করে।যোগাযোগের জন্য জিয়া কখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। যোগাযোগের জন্য তার একমাত্র ভরসা সিক্রেট অ্যাপস। যাতে কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে না পারে।

জিয়ার নেতৃত্বেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। গত বছরের এপ্রিলের পর থেকে এই সংগঠন কোনও হত্যাকাণ্ডে অংশ না নিলেও তারা নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া আনসার সদস্যরা জানিয়েছে। সিটিটিসি’র একজন কর্মকর্তা জানান, তারা জিয়াকে ধরার জন্য হন্যে হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু জিয়া এতটাই ধূর্ততার সঙ্গে চলাফেরা করে যে, তাকে ধরা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা থেকে শুরু করে গত বছরের এপ্রিল মাসে নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার ঘটনা তার নির্দেশেই হয়েছে। ব্লগার অভিজিৎ রায় এবং সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়ের হত্যা ঘটনায় জিয়া নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তদারক করেছে।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৪১ নম্বর লংকোর্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেছিল বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হক। বাড়ি মৌলভীবাজার সদরের মোস্তফাপুরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে জিয়া সবার বড়। ঢাকার বারিধারা এলাকায় থাকতো তারা। ২০০৭ সালে প্রথম স্ত্রী লিপি মারা যাওয়ার পর জিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে পটুয়াখালীতে। তার এই স্ত্রীর নাম সাফা জোহরা। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার দুই সন্তান রয়েছে। আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও তার আর যোগাযোগ নেই। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মগোপনে থেকেই জিয়া তৃতীয় বিয়ে করেছে।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের শেষের দিকে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর প্রথম দিকে রাজধানীতে থাকলেও পরে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় জিয়ার অবস্থানের কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। সেনাবাহিনীতে চাকরি করার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার কৌশল সব তার জানা। এজন্যই সে দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে থাকতে পারছে।
আরও পড়ুন: 

বনানীতে ব্যবসায়ী খুন: মুখোশধারীরা ঢুকেই বলে ‘তোর বস কই’, এরপরই গুলি (ভিডিও)