আমরা কি সেই এক বাঙালি!

23666430_1645364688818588_142885715_nবাঙালি, শব্দ একটি হলেও বিভক্ত অনেক জাতিতে। বাংলাদেশি বাঙালি, কলকাতার বাঙালি, বিহারের, উড়িষ্যার, মহাদেশ পেরিয়ে পশ্চিমে জন্মে বেড়ে ওঠা বাঙালি, এমন আরও কত! ভাষাগত মিল থাকলেও বর্তমান সময়ে এসে এরা সবাই কী সেই এক বাঙালি!

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এতসব বাঙালির মিল-অমিল নিয়ে ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিনে আলোচনায় বসেন বক্তারা। ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষে বেলা ৩টায় ‘দ্যা বেঙ্গলিস: এ রেস ডিভাইডেড’ শীর্ষক এ সেশনে আলোচক হিসেবে ছিলেন সাহিত্যিক সুদীপ চক্রবর্তী; সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনন্যা কবির;সাংবাদিক, সাহিত্যিক কুশনভা চৌধুরী এবংআইনজীবী, সাহিত্যিক ইখতিশাদ আহমেদ। সেশনটি সঞ্চালনা করেন সাহিত্যিক ও প্রকাশক ডেভিড দেবিদ্বার।

বাঙালিয়ানার সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে অনন্যা কবির বলেন, ‘জৈবিক, ঐতিহ্য এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর টান না থাকলে বাঙালি হওয়া যায় না। আর অবশ্যই বাঙালি হতে গেলে থাকতে হবে মাছ খাওয়ার প্রতি ভালোবাসা।’ ইখতিশাদ আহমেদের কাছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। আর এ প্রসঙ্গে সুদীপ চক্রবর্তী বাঙালির চিরায়ত ‘গা ছাড়া’ ভাবের দিকে ইঙ্গিত করেন।

সময়ের পালাক্রমে ভাষার ভেতরেই আঞ্চলিকতা, বাচনভঙ্গি, ভিন্ন শব্দ বাঙালির এক জাতি থেকে আরেক জাতিকে পৃথক করে ফেলেছে। আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক অবস্থানও বাঙালির মধ্যকার অমিল তৈরির অন্যতম নিয়ামক বলে চিহ্নিত করেন আলোচকরা। ‘নিজেদের মধ্যকার শ্রেণি ব্যবধান ও ধর্মগত বৈচিত্র্য ধীরে ধীরে এ দূরত্ব তৈরির পেছনে অনুষঙ্গ’- বলেন সুদীপ চক্রবর্তী।

তবে বিভেদের মাঝেও মিল রয়েছে প্রচুর। এখনো বাঙালিরা আড্ডা-তর্কে মেতে ওঠায় দারুণ পারদর্শী। সে আপনি যে ভূখণ্ডেই থাকুন না কেন। সঞ্চালক ডেভিড দেবিদ্বার এ প্রসঙ্গ তোলার সঙ্গে সঙ্গেই এক বাক্যে সায় দিয়ে ওঠেন আলোচক থেকে শুরু করে রুমভর্তি দর্শকদের সবাই।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলোনিয়াল আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র পরিচয় সৃষ্টি করেছে বাঙালিরা। কুশনভা চৌধুরীর মতে, ‘রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বা সত্যজিতের হাত ধরে শেকড়ের টানে একটা সময়ে এসে কলোনিয়াল প্রভাব থেকে বাঙালি মুক্ত হয়ে গেছে অনেকাংশেই।’

বাঙালি মাত্রই বরাবর বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন। শুধুমাত্র যে একটি বিষয়ে বিভেদ নেই এতো বাঙালির তা হচ্ছে বাংলা ভাষা। এ ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাহস ইতিহাসে কেবল বাঙালিরাই দেখিয়েছে।

দিনশেষে এখন হয়তো প্রচুর অমিল বিভিন্ন বাঙালি জাতির মধ্যে। তবে কোথাও একখানে থেকে গেছে কিছু দারুণ সমন্বয়। হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর-শেকড়।