আমার পরের বইয়ে থাকছে বাংলাদেশ: উইলিয়াম ডালরিম্পল

সাজিয়া ওমরের সঙ্গে স্কটিশ সাহিত্যিক উইলিয়াম ডালরিম্পলস্কটিশ সাহিত্যিক উইলিয়াম ডালরিম্পলের লেখালেখির শুরুর দিকের বিষয় ছিল নিজ ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত বা নিজ দেশেই সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়া মানুষের কথা। পরে তিনি লিখতে শুরু করেন ভ্রমণসাহিত্য ও ন্যারেটিভ হিস্ট্রি। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও রয়েছে তার। তিনি জানালেন, তার পরের বইয়ের পটভূমিতে রয়েছে আমাদেরই বাংলাদেশ।
‘ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৭’-এর দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে হাজির হয়েছিলেন স্কটিশ এই সাহিত্যিক। সেশনের সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক সাজিয়া ওমর।
উপস্থাপক মঞ্চে সাজিয়া ওমরকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর সাজিয়া দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন উইলিয়াম ডালরিম্পলের সঙ্গে। এরপর ডালরিম্পল নিজেই নিজের লেখালেখির গল্প বলতে শুরু করেন। জানান, ছোটবেলা থেকেই দু’টি বিষয়ে ভক্ত তিনি- ভ্রমণ ও ভ্রমণসাহিত্য। এরই টান থেকে তিনি কেবল ভ্রমণই করেননি, ভ্রমণসাহিত্যেরও একজন নিবিড় পাঠক ছিলেন। বিশের দশকের ক্ল্যাসিকাল ট্রাভেলগ, ভিক্টোরিয়ান ভ্রমণসাহিত্য- সবই তিনি ছোটবেলা থেকেই গিলেছেন গোগ্রাসে।
পরে ডালরিম্পল যখন কেম্ব্রিজে ভর্তি হলেন, ঘোরাঘুরির পরিমাণও বেড়ে গেল অনেক। আর সেই ঘোরাঘুরির গল্প নিয়েই লিখতে শুরু করেন তার প্রথম ট্রাভেলগ (ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগ)। সেটি যখন প্রকাশ হয়, তখন ডালরিম্পলের বয়স ২৪ বছর। নাম ‘ইন জানাদু’। অবশ্য বইটি লিখতে গিয়ে তিনি খানিকটা সমস্যাতেই পড়েছিলেন। কারণ ভালো ট্রাভেলগ লেখার জন্য ভ্রমণের সময় প্রচুর পরিমাণে নোট নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তার প্রথম জীবনের ভ্রমণগুলোতে তিনি সেভাবে নোটও নেননি, তেমন ছবিও তোলেননি। এই উপলব্ধি অবশ্য তার পরের বইগুলোতে ভীষণভাবে কাজে লেগেছিল।
ডালরিম্পলের দ্বিতীয় ভ্রমণ কাহিনিটি দিল্লিকে নিয়ে। তিনি বছর ছয়েক ছিলেন ভারতের এই রাজধানী শহরে। সেখানে মূলত সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতেন। বইটিতে তিনি কেবল দিল্লি ভ্রমণেরই বিবরণ দেননি, আলাপ করেছেন শহরটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়েও। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শহরের ইতিহাসে হিন্দু-মুসলমানের যে যৌথ অংশীদারিত্ব আছে এবং দেশভাগের কারণে সে ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে হঠাৎ করেই শহরটিকে একা হিন্দুর শহর বানানো হয়েছে- ভ্রমণের বর্ণনার পাশাপাশি উঠে এসেছে এসব তথ্যও।
ডালরিম্পল তার লেখালেখিতে বিশেষ করে বলেছেন স্বদেশ থেকে উৎখাত হওয়া বা স্বদেশে সংখ্যালঘু বনে যাওয়া লোকজনদের কথা। বিশেষ করে তার তৃতীয় বইটিতে এই বিষয়টি প্রকটভাবে উঠে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই ভ্রমণসাহিত্যে তিনি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টানদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। একইসঙ্গে উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা ও অবস্থানও।
স্কটিশ এই সাহিত্যিক পরে ন্যারেটিভ হিস্ট্রিও লিখতে শুরু করেন। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- হোয়াইট মোঘলস, বেগমস, থাগস অ্যান্ড হোয়াইট মোগলস, দ্য লাস্ট মোগল এবং রিটার্ন অব আ কিং- দ্য ব্যাটল ফর আফগানিস্তান প্রভৃতি।
তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্যটি জানা যায় সেশনের একদম শেষে, প্রশ্নোত্তর পর্বে। এক প্রশ্নের জবাবে ডালরিম্পল জানিয়েছেন, পরবর্তী বইটি তিনি লিখছেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপরে। কাজেই তার পরের বইয়ের অনেকটা অংশ জুড়েই থাকবে তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশ, যার অনেকটা জুড়েই থাকবে আজকের বাংলাদেশ।