‘মানুষ আমাকে পুড়িয়েছে’

নিজের কবিতা পাঠ করেন হেলাল হাফিজ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’

১৯৬৯ সালে লেখা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার এই লাইনগুলো তরুণদের রক্তে দ্রোহের বীজ ছড়িয়েছিল। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থে এই ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র সঙ্গে থাকা প্রেমের কবিতাগুলো দিয়ে হেলাল হাফিজ পরিণত হন কালের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে। ২৭টি সংস্করণ বের হওয়া এই একটি বই দিয়ে হেলাল হাফিজ যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তার নজির বাংলা সাহিত্যে আর নেই।

লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে পছন্দ করা এই কবি হাজির হলেন লিট ফেস্টের মঞ্চে। উৎসবের শেষ দিনে শনিবার (১৮ নভেম্বর) বাংলা একাডেমির লনে তিনি পড়ে শোনান তার বহুলপঠিত সব প্রেম ও দ্রোহের কবিতা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কবি শামীম রেজার সঞ্চালনায় মঞ্চে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি নিজের জীবনের কথাও তুলে ধরেন হেলাল হাফিজ।

হেলাল হাফিজ বলেন, ‘কবিতা এমন এক পিতৃঘাতী শব্দের শরীর, যা মানুষকে অমরত্ব দেয়, শেষ করে দেয়; লণ্ডভণ্ড করে দেয় মানুষের সংসার। এমন এক শব্দের নেশায় আমি যেদিন বুঁদ হয়েছিলাম, আসক্ত হয়েছিলাম; সেদিন আমি শপথ করেছিলাম- কবিতা দিয়ে বিত্ত নয়, আমি আমার জীবদ্দশায় মানুষ জমাতে চাই। মানুষ আমাকে পুড়িয়েছে, আমিও মানুষকে পুড়িয়েছি।’

বিখ্যাত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতা প্রসঙ্গে কবি বলেন, তিনি নিজে কখনও মিছিলে যাননি। তবে সে সময়ের পরিস্থিতি তাকে ভীষণভাবে তাড়িত করেছিল। তারই ফসল এই অবিস্মরণীয় কবিতা। ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনায় জন্ম নেওয়া এবং ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পদক বিজয়ী হেলাল হাফিজ এরপরই সকণ্ঠে আবৃত্তি করেন তার বিখ্যাত সব কবিতা। আর তাতে মুগ্ধ দর্শকসারিতে তখন মুহুর্মুহু করতালি।

দর্শক আসনে বসে কবির সেশনটি উপভোগ করেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ ও আহসান আকবার। তাদের সঙ্গে অস্কারজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন ও লেখক বেন ওকরিও কবি হেলাল হাফিজের আবৃত্তি উপভোগ করেন।