রাজধানীতে গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু

 

লাশরাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় মনি (১২) নামে এক কিশোরী গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে তার পরিবারের দাবি, মনিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। রবিবার (১৯ নভেম্বর) বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান।
জানা গেছে, নিহত মনি ধানমন্ডির বাসিন্দা মেঘনা গ্রুপের পরিচালক মো. জসিম উদ্দিনের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার ফতেপুর গ্রামে। বাবার নাম আহাম্মদ আলী।

জসিম উদ্দিনের বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ধানমন্ডির ১২ নম্বর রোডের ১০/১ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন। মনি তার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে প্রায় এক বছর ধরে কাজ করতো। রবিবার বিকাল ৫টার দিকে বাসার গৃহকর্ত্রী আমাকে ডাকেন। আমি গিয়ে দেখি, মনি বিছানায় শুয়ে আছে। এসময় গৃহকর্ত্রী জানান, মনি জানালায় বিছানার কাপড় দিয়ে ফাঁস দিয়েছে। তখন তাকে  আমরা বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ধানমন্ডি থানার এসআই মতিউর রহমান জানান, সোমবার সকালে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মনির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।’
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘কিশোরীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কার শরীর থেকে নেক টিস্যু ও ভিসেরা সংরক্ষণ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর আগে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা, তা জানতেও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।’

এদিকে, সোমবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢামেক মর্গে মেয়ের মরদেহ নিতে আসেন মনির বাবা-মা ও স্বজনরা। তারা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মনি আত্মহত্যা করেনি। বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে।


মনির বাবা আহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার এতে ছোট মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন হলো আমার মেয়ে ওই বাসায় কাজ করছে। কিন্তু একদিনও আমার সঙ্গে মেয়েকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। মনিকেও একদিনও ছুটি দেয়নি বাড়িতে যাওয়ার জন্য।’
নিহত মনির নানা আব্দুস শহীদ জানান, বছরখানেক আগে এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে মনি ও তার বড়বোন মুক্তাকে খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় জসিম উদ্দিনের মেয়ের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে মনিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জসিম উদ্দিনের ধানমন্ডির বাসায়। তাকে মাসে ১ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হতো।
এ ঘটনার পর সোমবার পুলিশের মাধ্যমে মুক্তাকে জসিম উদ্দিনের মেয়ের তিলপাপাড়ার বাসা থেকে এনে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে।