গাবতলীর অবস্থা আবারও বেহাল

যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা, ইউটার্ন ও ভ্রাম্যমাণ অবৈধ দোকান— সব মিলিয়ে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের চারপাশে আবারও চিরচেনা চিত্র ফিরে এসেছে। এসব কারণে স্থবির হয়ে পড়ছে ওই এলাকা। এতে যানজটের ভোগান্তিতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে।

গাবতলীতে যত্রতত্রই থামছে বাসনির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক গাবতলীর আশপাশের সড়কে গাড়ি দাঁড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তখন অতীত হয়ে যায় এখানকার দীর্ঘদিনের ভোগান্তি যানজট। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে মেয়র দেশের বাইরে যাওয়ার পর আবারও আগের বেহাল অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে টার্মিনালটি।

জানা গেছে— ঢাকা থেকে দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাওয়ার দূরপাল্লার বাসের একমাত্র টার্মিনাল গাবতলী বাসস্ট্যান্ড। প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার যানবাহন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায় এখান থেকে। কিন্তু যানবাহনগুলোর বেপরোয়া আচরণে সড়কজুড়ে লেগে থাকে যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। পুলিশও এখন আর আগের মতো বাধা দিচ্ছে না। নেই ‘গাড়ি পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’ বা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ লেখা সাইনবোর্ডগুলোও। তবে আগের চেয়ে সড়কগুলো অনেক উন্নত হওয়ায় যানজট সহনীয় রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আগের মতোই যানবাহনগুলো বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে রাস্তায়। ডেকে ডেকে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। পার্কিং করে রাখা কয়েকটি গাড়িও চোখে পড়লো। অনেকেই রাস্তায় গাড়ি রেখে মেরামত করছেন। দূরপাল্লার বাসগুলোও টার্মিনালের ভেতর থেকে যাত্রী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে যে একটির কারণে অন্যটি যেতে পারছে না। সামনের গাড়িটি না সরলে আটকে থাকে পেছনের গাড়ি। যানবাহনগুলোকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত বসে থাকতে হয় যানজটে। এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

পুলিশের নির্দেশনা মানছে না কেউইবেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চালক সুশান্ত কুমার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আসলে সচেতনতা বৃদ্ধি করে কোনও লাভ নেই। আইন অমান্যকারীদের সোজা করতে পারে জেল-জরিমানা আর পুলিশের লাঠি। যতদিন পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ কঠোর ছিল ততোদিন সবই ঠিক ছিল। মেয়র নেই, পুলিশও নেই। এ কারণে রাস্তায় সেই পুরনো বেহাল চিত্র।’

টার্মিনালের সামনের রাস্তায় পূর্বাশা পরিবহনের একটি বাস রেখে মেরামত করতে দেখা গেলো। জানতে চাইলে মেরামতকারী নোমান সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে এখানে রাখা যেতো না। আমরা অনেকদূর গিয়ে গাড়ি পার্কিং করে রাখতাম। এখন রাস্তা একটু ফাঁকা দেখছি। আর পুলিশও নেই। সেজন্যই যান্ত্রিক ত্রুটিটা সেরে নিচ্ছি।’

সড়কের ওপরই দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে বাসএকই চিত্র দেখা গেছে কল্যাণপুরেও। এখানকার প্রধান সড়কের দুই পাশে পার্কিং করে রাখা দূরপাল্লার বাসগুলো। সঙ্গে ট্রাক আর মিনিট্রাকও আছে। তাই এই এলাকায় প্রায় সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় যানজট দেখা যায় বেশি। এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় একজন বাড়িওয়ালা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেয়র আনিসুল হক থাকার সময় পরিস্থিতি একটু ভালো ছিল। এখন আবার আগের মতো হয়ে গেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে দূরপাল্লার বাস। এগুলো রাখার নির্দিষ্ট কোনও স্থান নেই। সব বাসের পার্কিং হয় রাস্তায়। বাস মালিকরা ব্যবসা করতে গাড়ি কেনেন, কিন্তু গাড়ি রাখার জায়গা নিয়ে তাদের যেন কোনও মাথাব্যথা নেই।’

এসব প্রসঙ্গে তেমন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিএনসিসি প্যানেল মেয়র ওসমান গণি। তার ভাষ্য, ‘বিষয়টি জেনে তারপর আমাকে কথা বলতে হবে।’ বর্তমান চিত্র তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখন পুলিশ দেখছে।’

রাস্তা জুড়ে পাকিংগাবতলীর এই বাস টার্মিনালের মালিক ডিএনসিসি। এই স্থানকে ঘিরে সৃষ্ট যানজট দূর করতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মেয়র আনিসুল হক গাবতলী টার্মিনাল পরিদর্শন করেন। তিনি ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন। এজন্য রাস্তার ওপর কোনও বাস, মিনিবাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান বা অন্য কোনও যানবাহন দাঁড় করানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা করেন ডিএনসিসি মেয়র। ওই সভায় এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কল্যাণপুর গাবতলী হয়ে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটি অবৈধ পার্কিং মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপরই ওই রাস্তায় কোনও যানবাহন দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। এরপর অবস্থা অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যায় টার্মিনালের সামনের রাস্তা। ২০১৭ সালের শুরু থেকে চলছিল এভাবে।