‘বিচার বিভাগ-নির্বাহী বিভাগের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল’

শফিক আহমেদনিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের বিষয়ে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অনেক দিনের একটা দাবি ছিল, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি এবং আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হোক। বিলম্ব হলেও এটা প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমার মনে হয়, বিধি প্রকাশের পর ভুল বোঝাবুঝির আর কোনও অবকাশ নেই।’

মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘এই বিধি অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে কোনও রকম অসদাচরণ বা অভিযোগ তোলা হয়, তাহলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। সেটা বিস্তারিত আছে।’

যে বিষয়গুলো নিয়ে আগে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, এই গেজেটে তার কতটুকু সুরাহা করা হয়েছে জানতে চাইলে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার তো মনে হয় এই বিধিতে সবকিছু কাভার করেছে। মাসদার হোসেন মামলার ফলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হয়। এটা হয়েছে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। ২২ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, “রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবেন”। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীন।’

শফিক আহমেদ আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রীর কয়েকটা সিটিং দিয়েছেন। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট একমত হয়েছে এবং সে আলোকেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এটা অনুমতি দিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করা।’

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে গেজেট তৈরির কথা ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শফিক আহমেদ বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অদক্ষতা যাই থাকুক কোনও অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পদ্ধতিটা পূর্ণ করার পর রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই আদেশটি দেবেন। সরাসরি কোনও ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারবে না। এখানে নিয়ম হলো, সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোনও ফাইল ইনিশিয়েট হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভার্বাল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সঙ্গে দফায় দফায় বসে এই বিধিটা অ্যাপ্রুভড করা হয়েছে। কেউ বলতে পারবে না যে, ওনাদের (আপিল বিভাগের বিচারপতিরা) সঙ্গে বসে যেটা স্থির হয়েছিল, তা বদলে দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি, মাসদার হোসেন মামলার পর অধস্তন আদালতের নিয়োগ পদ্ধতিটা একেবারেই সুপ্রিম কোর্টের হাতে। আর সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বলতে এই নয় যে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গেই পরামর্শ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট কি এখন চলছে না (প্রধান বিচারপতিকে ছাড়া)?’

সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইন বা বিধি তো বাইবেল না যে, পরিবর্তন করা যাবে না। এটার অসুবিধা আছে মনে হলে তা সংশোধন করা যেতে পারে। যদি এমন বিধান থাকে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তবে সেটা সংশোধন করা যেতে পারে। আইনও তো বাতিল হচ্ছে। আর এটা তো বিধি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। আমি দ্বৈত শাসনের কিছু দেখিনি। কোনও কাজই সুপ্রিম কোর্টের মতামত ছাড়া করা হয়নি।’