প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান দুই শহীদের স্ত্রী

বাঁ থেকে ফিরোজা বেগম ও জামিলা খাতুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত দুই শহীদের স্ত্রী। তাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেলে, তারা যদি প্রধানমন্ত্রীকে শোনাতে পারেন তাদের দুঃখের কথা, তবে বদলে যেতে পারে তাদের জীবন। কেমন করে কাটছে তাদের দিন, সুযোগ পেলে সেসব কথাও শোনাবেন প্রধানমন্ত্রীকে,বলেছেন এই দুই নারী।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ ‍চুন্নু মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৬৫) আর আর শহীদ হাফিজের স্ত্রী জামিলা খাতুন (৭৫) মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। তারা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটিবারের জন্য দেখা করতে চাই। তাকে বলতে চাই- আমরা ভালো নেই।’

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে হাজারো মানুষের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছেন ফিরোজা বেগম ও জামিলা খাতুন। স্বামী হারানোর সেদিনের কথা স্মরণ করে তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ফিরোজা বেগমের স্বামী শহীদ চুন্নু ও জামিলা খাতুনের স্বামী শহীদ হাফিজ- দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে প্রহরীর কাজ করতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশ সার্চ লাইটে তারা উভয়ে নিহত হন। বর্তমানে এই দুই শহীদের কবর রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে । 

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে শহীদ হাফিজের জামিলা খাতুন জানান, বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ী কোয়ার্টারে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে থাকতেন। পরে তিনি জানতে পারেন তার স্বামী ২৫ মার্চ রাতে শহীদ হয়েছেন।

তাদের ছেলে শাহজালাল বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান বিভাগের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন উল্লেখ করে জামিলা খাতুন বলেন, ‘অনেক বয়স হয়েছে। মাসে অনেক টাকার ওষুধ লাগে। কিন্তু আমাদের সরকার তো কিছুই দেয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারলে, তাকে আমাদের দুঃখের কথা বলতাম। কেমনে আমরা চলতেছি।’

শহীদ ‍চুন্নু মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা বেগমও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ী কোয়ার্টারে থাকেন। জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন গ্রামের বাড়ি ভৈরবে। লোকজনের কাছ থেকে তিনিও জানতে পারেন যে, ২৫ মার্চ রাতে তার স্বামী ‍চুন্নু মিয়াকে হত্যা করা হয়। সাত দিন পরে তারা খবরটি জেনেছিলেন।

ফিরোজা বেগম বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে তার কোয়ার্টারে থাকি। অনেক কষ্টে আমাদের জীবন যাচ্ছে। সরকারে পক্ষ থেকে আমাদের কিছু টাকা দিলে ভালোভাবে চলতে পারতাম। বঙ্গবন্ধুর সময় দুই হাজার টাকা পেয়েছিলাম। আমরা যদি একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারতাম, তাহলে আমাদের দুঃখের কথা তাকে বলতাম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মিন্নত আলী বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘আমরা দুই বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পাইনি। শহীদ পরিবারের সন্তানরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। সরকার তাদের জন্য কিছু করছেন না।’