২০১৭ সালের প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে আম গাছে ওঠা ছাগলের ছবি এবং ‘ও’ তে ‘ওড়না চাই’ লিখে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল এনসিটিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের বইয়ে ওই দু’টি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার ছবিতে দেখানো হয়েছে ছাগল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওড়না পরা মেয়ের ছবি বাদ দিয়ে ওজন পরিমাপক যন্ত্রের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। এই দু’টি বড় পরিবর্তনসহ বইটির অন্তত ৯ জায়গায় পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
বইটিতে দেখা গেছে, ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আ’ বর্ণ দিয়ে শব্দ তৈরি শেখাতে ‘আম খাই’ লিখে গাছের নিচে একটি ছাগল দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও এ বছরের বইয়ে ছাগলটিকে গাছে ওঠা অবস্থায় দেখানো হয়েছিল। আবার ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ও’ বর্ণ দিয়ে শব্দ শেখাতে একটি ওজন পরিমাপক যন্ত্রের ওপর একটি মেয়েকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে ‘ওজন নাও’। এ বছরের বইয়ে ‘ও’ তে ‘ওড়না চাই’ শব্দ যুক্ত করে ছবিতে একটি কন্যাশিশুর শরীরে ওড়না পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত করা এ পাঠ্যবইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘র’ বর্ণ শেখাতে ‘রং চিনি’ লিখে রঙধনুর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। যদিও এ বছরের বইটিতে ‘র’ বর্ণ শেখাতে ‘রথ টানি’ লিখে রথ টানছে এমন ছবি দেওয়া হয়েছিল।
এ বছরের বইয়ে ৪৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ঊ-কার; ূ’ বোঝাতে ‘শূর যায়। দূর গায়’ লিখে বন্দুক হাতে এক ব্যক্তির ছবি দেওয়া হয়েছিল। এবার তা পরিবর্তন করে আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত করা বইয়ে ‘সূর্যের হাসি’র ছবি যুক্ত করে লেখা হয়েছে ‘দূর আকাশে। সূর্য হাসে।’ ৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ছেলে মেয়ে খেলা করে’ লিখে ছবিতে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে খেলা করছে—এমন ছবি যুক্ত করা হয়েছে। যদিও এ বছরে বইয়ে লেখা ছিল ‘ছেলেরা খেলে, মেয়েরা নেচে চলে।’
এ বছরের বইয়ের ৬৪ পৃষ্ঠায় ‘পাঁচ আর ছয়, বাঘ দেখে ভয়’ বাক্যের ছবিতে বাঘকে খাঁচায় ঢোকানো হয়েছে। ৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কথা’ প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটি পরিবর্তন করে স্পষ্ট ছবি দেওয়া হয়েছে। এ বছরের বইয়ে বঙ্গবন্ধুর একটি হাতে আঁকা ছবি ছিল।
বইটির এমন পরিবর্তন ও পরিমার্জন বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বছরের শুরুতে সমালোচনার পর শিক্ষামন্ত্রী নিজে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আমরা বইগুলোর ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছি। তারা চেষ্টা করেছেন, শতভাগ শুদ্ধ করে দিতে, সেভাবেই সংশোধন করে শুদ্ধ করা হয়েছে। তারা যেটা স্পর্শকাতর মনে করেছেন, ভুল মনে করেছেন, সেটা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর যে রকম সমালোচনা হয়েছে, এর আগের বছর বইগুলোতে আরও বেশি ভুল ছিল। যেমন, ছাগল ও ওড়নার ছবি কিন্তু এ বছর নতুন যুক্ত হয়নি, এটা ২০১২ সাল থেকেই বইয়ে ছিল। কিন্তু যেহেতু সমালোচনা হয়েছে, সেহেতু সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরই আমরা ভুল-ত্রুটি সংশোধন করি। এটা আমাদের রুটিন কাজ।’